বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির বৈঠকে এবি পার্টি হাসিনার মত রাষ্ট্রপতিও অবৈধ, তাকে যেতেই হবে
Published: 2024-10-28 19:25:12 BdST, Updated: 2024-12-06 12:56:04 BdST
নিজস্ব প্রতিবেদক: অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা । জনরোষে তিনি ক্ষমতার মসনদ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। সেই হাসিনার অবৈধ পার্লামেন্টে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টও অবৈধ। কাজেই এ রাষ্ট্রপতি ক্ষমতায় থাকার কোন বৈধতা নেই। তাকে যেতেই হবে। তিনি থাকলে নানা ধরনের জটিলতা ফিরে আসবে। সোমবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির একটি যৌথ প্রতিনিধি দলের সাথে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
বিজয় নগরস্থ এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বেলা ১ টায় এই দ্বিপাক্ষিক মতবিনিময় সভাটি শুরু হয়। সভায় রাষ্ট্রপতি ও সাংবিধানিক সংকট বিষয়ক চলমান যে বিতর্ক তা নিয়ে উভয় পক্ষ তাদের মতামত তুলে ধরেন। বৈঠক এবি পার্টি বলেন, করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারটি দেশের এক কঠিন ক্রান্তিকালে গঠিত হয়েছে। পরিস্থিতিগত কারণে সে সময়ে সরকার গঠনকালীন প্রক্রিয়া, সরকারের প্রকৃতি ও চরিত্র নিয়ে বিশদ ভাবার সুযোগ ছিলনা। ফলে ডকট্রিন অব নেসিসিটি, গণঅভ্যুত্থানের তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়া এ তিনটি যৌথভাবে অনুসরণ করতে গিয়ে এক ধরনের জটিল সমীকরণ দাঁড়ায়। অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও পলায়নের পর অবৈধ রাষ্ট্রপতির অধীনেই নতুন সরকারকে শপথ গ্রহণ করতে হয়। এক ধরনের নৈতিক বৈপরীত্য সত্বেও সকল রাজনৈতিক দল ও বিপ্লবী ছাত্র-জনতা তা মেনে নেন এবং সম্মতি জানান।
সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির একটি বিতর্কিত মন্তব্য ও বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়। রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও শপথ ভঙ্গের অভিযোগ উঠে খোদ সরকারের পক্ষ থেকে। এ নিয়ে রাজপথে বিক্ষোভ ও বঙ্গভবন ঘেরাওয়ের মত কর্মসূচি দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণের দাবি জানিয়ে সর্বমহল সোচ্চার হয়। রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে বা তাকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত হলে এর সাংবিধানিক প্রক্রিয়া কী হবে? এর কারণে কোন সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে কিনা এ নিয়ে রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজের মধ্যে নানা রকম বিতর্ক তৈরী হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে এহেন পরিস্থিতিতে এবি পার্টি মনে করে:
(১) অবৈধ রাষ্ট্রপতির দ্বারা রাষ্ট্রের গোপনীয়তা ও শপথ ভঙ্গের বিষয়টি যেহেতু স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে এবং সরকারও তা মনেকরে সেহেতু কালবিলম্ব না করে রাষ্ট্রপতির অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। (২) রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল যেহেতু সাংবিধানিক সংকটের আশংকা করছে তা নিয়ে অহেতুক বিতর্ক বা বিভেদে না জড়িয়ে এ ব্যপারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেয়া যেতে পারে। যেভাবে ইতোপূর্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেয়া হয়েছিল।(৩) অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করার সময়ে যেহেতু পরিস্থিতিগত কারণে এর প্রক্রিয়া, সরকারের প্রকৃতি ও চরিত্র নিয়ে বিশদ ভাবার সুযোগ ছিলনা, বর্তমানে এ বিষয়ে একটি সুচিন্তিত সমাধান বের করা দরকার। অর্থাৎ এটা কি সাংবিধানিক সরকার নাকি বিপ্লবী সরকার এ বিতর্ক অবসানের জন্য একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো দরকার। (৪) সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের একটি প্রোকলোমেশন বা ঘোষণাপত্র তৈরী করা যাতে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে প্রচলিত সংবিধানের অনুসরণের কথা থাকবে এবং সরকারের অপরিহার্য কোন সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংবিধানিক বিতর্ক উঠলে তাতে প্রোকলোমেশন বা ঘোষনাপত্রই প্রিভেইল করবে মর্মে পরিস্কার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হবে। (৫) সকল পক্ষের সাথে আলাপ করে দ্রুত সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পুণর্লিখন প্রস্তাবনা চুড়ান্ত করা উচিত। (৬) বর্তমান সময়ে সরকারের কার্যক্রমকে আরও জোরদার, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গতিশীল করার লক্ষ্যে সরকারকে ‘জাতীয় ঐকমত্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’হিসেবে পুণর্গঠন করা উচিত। সেক্ষেত্রে সকল রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব নিয়ে সরকারে আরও নতুন উপদেষ্টা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
উপরোক্ত প্রস্তাব গুলোর পাশাপাশি আমরা বলতে চাই; মাত্র তিন মাস আগে রাজপথের জীবন-মরণ সংগ্রামে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল তা কেন আজ ক্ষুন্ন হচ্ছে! সেটা আমাদের ভাবতে হবে। মাত্র কয়েক মাসে আমাদের কার কোথায় কী ভুল হয়েছে ও মাণ-অভিমান জন্ম নিয়েছে তা উপলব্ধি করতে হবে। কার দায় কতটুকু সেটা নির্ণয় করে সংশোধিত হতে হবে। শত শত শহীদ, মর্মান্তিক ভাবে আহত হাজার হাজার পঙ্গুত্ব বরণকারী বিপ্লবী সৈনিক এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী লাখো কোটি জনতার পক্ষ থেকে আমাদের আকুল আবেদন; আসুন সবাই মিলে সরকারের বৈধতা, সাংবিধানিক বিতর্ক, নির্বাচন আগে না সংস্কার আগে, কী কী সংস্কার দরকার এসব বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলি। ভুল ত্রুটি পেছনে ফেলে বিজয়কে সুসংহত করি। ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার বিলোপ ও সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্নকে সফল করে তুলি।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক কমিটির আহবায়ক নাসির আব্দুল্লাহ, মুখপাত্র সামান্থা শারমিন, সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল ও হান্নান মাসউদ। আলোচনায় এবি পার্টির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া, দফতর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব এবিএম খালিদ হাসান, মহানগরী উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন, সহকারী সদস্য সচিব ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক, এবি যুবপার্টির আহবায়ক শাহাদাতুল্লাহ টুটুল ও ছাত্রপক্ষের আহবায়ক মোহাম্মদ প্রিন্স।
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।