বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকট নতুন চ্যালেঞ্জ : গভর্নর


Published: 2022-06-19 11:01:25 BdST, Updated: 2024-04-18 17:31:30 BdST


নিজস্ব প্রতিবেদক : কোভিড পরবর্তীতে দেশে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি ও ডলার এক্সচেঞ্জ রেট। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

শনিবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় আয়োজিত দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ‘বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়নে প্রতিরোধ কার্যক্রমের ২০ বছর’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, আমাদের যে পরিমাণে রিজার্ভ রয়েছে তাতে ভয়ের কিছু নেই। সাধারণত তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান ডলার মজুদ থাকলে রেজাল্ট কে স্থিতিশীল ধরা হয়। বর্তমানে আমাদের ৪১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। বর্তমানে এক মাসে আমদানি ব্যয় মেটাতে লাগে সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার। সেই হিসেবে তিন মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধে ব্যয় হবে সাড়ে ২২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া সরকারের নিরাপত্তা সামগ্রী বাবদ আরও তিন বিলিয়ন ডলার দরকার হয় সব মিলিয়ে ২৬ বিলিয়ন ডলার থাকলেই চিন্তামুক্ত থাকা যায়।

গত অর্থবছরে ব্যাংগুলো থেকে ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনে নিয়েছে কারণ সে সময় কোভিডের কারণে আমদানি ব্যয় কম প্রয়োজন ছিল। চলতি অর্থ বছরের শুরু থেকে আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর কাছে চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গভর্নর বিএফআইইউর বিষয়ে বলেন, এন্টি মানি লন্ডারিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সংস্থাটি। লন্ডারিংয়ের টাকা যাতে টেরোরিজমে ব্যয় না হয় সে বিষয়ে সতর্ক সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেন গভর্নর।

দুর্যোগ কবলিত এলাকার বিষয়ে গভর্নর বলেন, সিলেটের কৃষকরা ঋণ পরিশোধ করুক বা না করুক তাদেরকে ঋণ বিতরণ বাড়িয়ে দিতে হবে। এছাড়া বন্যা কবলিত এলাকায় সিএসআর খাত থেকে ব্যয়ের পরামর্শ দেন তিনি।

বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, এছাড়া বিএফআইইউয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি মাসরুর আরেফিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের দেয়া সেনশন এখন অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এটি দেশের অর্থনীতির নানা খাতকে প্রভাবিত করছে। ই-কমার্সে নজরদারি বাড়ানো দরকার। কারণ অল্প অল্প করে হলেও এর মাধ্যমে অনেক টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব সলিমুল্লাহ বলেন, মানি লন্ডারিং মানে শুধু বিদেশে টাকা পাচার নয়। অবৈধ উপার্জিত অর্থ বৈধতার চেষ্টা করা হলে সেটিকে লন্ডারিং বলা হয়। আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। মানুষ আমাদের কাজে সন্তুষ্ট কিনা তা ভাবতে হবে। কাজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে।

যেহেতু বাংলাদেশের টাকা বিদেশে চলে না, তাহলে লন্ডারিং হচ্ছে কেন এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, মূলত টাকা পাচার হচ্ছে না দেশের সম্পদ পাচার হয়। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, রপ্তানির মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে অর্থাৎ যে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসার কথা আসছে না। বিপরীতে দেশের সম্পদ চলে যাচ্ছে। এছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে কিছু টাকা পাচার হয়। এ ক্ষেত্রেও বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে না। অর্থপাচারের দুর্বলতা হিসেবে সংশ্লিষ্টদের বুঝতে না পারা এবং সিস্টেমের গলদকে দায়ী করেন তিনি।

সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখা মানেই পাচার নয় উল্লেখ সলিমুল্লাহ বলেন, উন্নত বিশ্বের অনেকেই সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকে টাকা জমা রাখে তাহলে কি উন্নত বিশ্ব থেকেও টাকা পাচার হয়। সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার মানেই টাকা পাচার নয়। এছাড়া বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা সুইস ব্যাংকে টাকা রাখছে তাই সব টাকা দেশ থেকে পাচার হচ্ছে সেটি বলার সুযোগ নেই। গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্টদের তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা দরকার বলে মনে করেন সচিব।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, ব্যাংক নিজে মানি লন্ডারিং করে না কিন্তু কাস্টমারের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। প্রকৃত সুবিধাভোগী গ্রাহক ব্যাংকাররা গ্রাহকের অর্থপাচারের সঙ্গে অনেক সময় জড়িয়ে পড়ে। অর্থপাচার রোধে তিনি দুটি পরামর্শ দিয়েছেন, এর মধ্যে ক্যাশ ট্রানজেকশনে রেস্ট্রাইক্টেট করার দাবি করেন। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষকে ব্যাংক মুখী করতে হবে। মানুষ যত ব্যাংকের আসবে মানিলন্ডারিং তত কমবে।

সেমিনারে বিএফআইইউয়ের অতিরিক্ত পরিচালক কামাল হোসেন বলেন, পাচার করা অর্থ উদ্ধার জটিল কাজ। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছ থেকে। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকে থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থের বিষয়ে ২০১৪ সাল থেকে তথ্য প্রকাশ করে আসছে ব্যাংকটি। সেই তথ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুদক ও তদন্তকারী সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে।

সেমিনারে জানানো হয়, এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ৮০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আর্থিক তথ্য সংগ্রহ করেছে বিএফআইইউ।

মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসের অর্থায়ন প্রতিরোধে বিএফআইইউ চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) এপ্রিল পর্যন্ত তদন্তাধীন ৯টি মামলার বিপরীতে ৮৬৬ কোটি টাকা জব্দ করেছে। যদিও আগের (২০২০-২১) অর্থবছরে সাতটি মামলার বিপরীতে ক্রোক করা টাকার পরিমাণ ছিল ৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। একইসঙ্গে গত পাঁচ বছরে ৬৩টি তদন্তাধীন মামলার বিপরীতে টাকা ক্রোক করা হয়েছে এক হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা।

এছাড়া বিএফআইইউ চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে বাজেয়াপ্তকৃত অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা পড়েছে ২৭ কোটি টাকা। একইসঙ্গে গত পাঁচ অর্থবছরের সরকারের কোষাগারে জমা পড়েছে এক হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ থেকে মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, হংকং, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের দেশগুলোতে অর্থপাচার হয় বলে সেমিনারে জানানো হয়।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।