শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক সপ্তাহে সহ-সহস্রাধিক আটক বৈধ পারমিট থাকা সত্বেও মালয়েশিয়ায় থামছেনা ধরপাকড়!


Published: 2017-03-05 11:14:12 BdST, Updated: 2024-04-19 13:52:21 BdST

বিওয়াচ ডেক্স: বৈধ পারমিট থাকা সত্বেও ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্তৃক হয়রানির শিকার। থামছেনা ধরপাকড়! এক সপ্তায় বাংলাদেশি সহ সহস্রাধিক আটক হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দেশটিতে অবৈধ ভাবে বসবাসকারিদের গ্রেফতারে এ অভিযান চালিয়েছে ইমিগ্রেশন বিভাগ। মালয়েশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলছে ধর পাকড়। অবৈধদের ধরপাকড়ের পাশাপাশি গ্রেফতারের নামে বৈধপারমিট ধারিদেরও ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া টাকার বিনিময়েও কেউকেউ ছাড়া পাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা আতংকে রয়েছেন। প্রবাসীরা প্রবাসীরা প্রশ্ন ছুড়েছেন, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের দ্বি-পাক্ষিক সু সম্পর্ক থাকার পরেও কেন এ অবস্থা ?
এদিকে গত বছরের ১৫ ফে্রুয়ারি রি-হিয়ারিং নামে অবৈধদের বৈধ হওয়ার ঘ্ষেণা দেয়। ওই রি-হিয়ারিংএর আওতায় এক লাখ ৮৮ হাজার বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিক রেজিষ্ট্রেশন করলেও মাত্র ১৮ হাজার বাংলাদেশি ভিসা পেয়েছেন। বাকি ১ লাখ ৭০ হাজার এখনও ভিসা পাননি । তবে এ রি-হিয়ারিং প্রোগ্রাম গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হলেও আবার চলতিবছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধ হওয়ার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে রি- হিয়ারিং প্রোগ্রামের পাশাপাশি চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়া সরকার ঘোষণা দিয়েছে অবৈধ শ্রমিকদের অস্থায়িকাজের নিবন্ধন। এ নিবন্ধনের নাম দেয়া হয়েছে ই-কার্ড। অবৈধ অভিবাসিদের অভিযোগ মালয়েশিয়া সরকার বৈধতার আওতায় আনার ঘোষনা দিয়ে ও ইমিগ্রেশন থেকে ভিসা পাচ্ছেনা ।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাইন্সেলর (শ্রম) মো: সায়েদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ধরনের অভিযোগের প্রেক্কিতে সংশিø­ষ্টদের অভিহিত করা হয়েছে। ধরপাকড় হচ্ছে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগের রুটিন কাজ। কাগজ পত্র সঠিক থাকলে ছেড়ে দেয়ার কথা। তারপরেও যদি ধরে নিয়ে যায় সঠিক কাগজ পত্র নিয়ে হাই কমিশনে যোগাযোগ করা হলে অবশ্যই তাদের ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।
সায়েদুল ইসলাম অরোও জানান, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ বিদেশি অবৈধ শ্রমিকদের বৈধকরণে চলমান ই-কার্ড বিষয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পুত্রজায়ায় ইমিগ্রেশনের এক সভা অনুষ্ঠিত হয় যাতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য মালয়েশিয়ায় শ্রমিক সরবরাহকারী অন্যান্য দেশগুলোর দূতাবাসের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক হাজী মুফার আলী এতে সভাপতিত্ব করেন।
এদিকে মালয়েশিয়ায় বসবাসকারি কাগজপত্রহীন বিদেশি শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার শেষ সুযোগ অ্যানফোর্সমেন্ট কাড (ই-কাড) বা টেম্পোরারি পাস বলে জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুরোধে মালয়েশিয়ান সরকার এই সুযোগটি দেন দেশটিতে বসবাসকারী কাগজপত্রহীন শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার জন্য।
রাষ্ট্রদূত জানান, বৈধ কাগজপত্র পেতে মাইইজি’র অধীনে চলমান রি-হায়ারিং প্রকল্পে এক লাখ ৮৮ হাজার বাংলাদেশি রেজিস্ট্রেশন করেছেন। আর অন্য সব দেশ মিলিয়ে করেছে মাত্র ১০ হাজার। এছাড়া নতুন প্রকল্প ই-ক্যাড এখন পর্যন্ত ৬১ জন বাংলাদেশি পেয়েছেন। অন্যদিকে সব দেশ মিলিয়ে পেয়েছে ৩৯টি।
যারা মেডিক্যাল আনফিট, যাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বা চলমান রয়েছে এবং যেসব কর্মী বৈধভাবে কোনো কর্মক্ষেত্রে কর্মরত ছিলেন কিন্তু তারা মালিকপক্ষকে অবহিত না করে পালিয়ে গেছেন এবং অফিস তার বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশনে অভিযোগ দাখিল করেছে’ এই তিন শ্রেণির শ্রমিকরা ই-ক্যাড করতে পারবে না।
আগে তিন কিংবা চারটি খাতে লোক আনার কথা থাকলেও এখন বাংলাদেশ থেকে সব সেক্টরের জন্য লোক আনা হবে বলেও জানান দেশটিতে নিযুক্ত থাকা রাষ্ট্রদূত।
ই-ক্যাডের আওতায় আসতে বাংলাদেশিদের জোরালো আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা সবাইকে সচেতন করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় দূতাবাসের কন্সুলার টিম পাঠানো হচ্ছে। ই-ক্যাডধারীরা দ্রুত পাসপোর্ট করাতে পারবেন বলেও জানান তিনি। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন প্রধান মুফার আলী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটিতে কোন অবৈধ লোক থাকতে দেয়া হবেনা।
মুফার আলী বলেছেন, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি’১৭ থেকে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত ১৫টি দেশের অবৈধ শ্রমিকদের অস্থায়ী কাজের জন্য ই-কার্ড নিবন্ধন শুরু হয়েছে।
যেকোনো স্টেট ইমিগ্র্যাশন অফিস থেকে ই-কার্ডের জন্য নিবন্ধন করা যাবে। সম্প্রতি সাংবাদিক সম্মেলনে ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক আরো বলেন সকল নিয়োগকর্তাদের জন্য এটাই শেষ সুযোগ যারা অবৈধ বিদেশী শ্রমিকদের কাজে নিয়েছে তাদের অবশ্যই ই-কার্ড করার জন্য আহবান জানাচ্ছি। ই-কার্ড নিবন্ধন চলবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত, কোনো ভাবেই এই সময় সীমা বর্ধিত করা হবে না এবং যারা এই সুযোগের পরেও ই-কার্ড করবেন না তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে, এবং অবৈধ শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
ই-কার্ড নিবন্ধন প্রসেসিং টাইম মাত্র ২দিন। ইমিগ্রেশন বিভাগ, নিয়োগকর্তা এবং অবৈধ শ্রমিকদের সতর্ক করে দিয়ে মুফার বলেন বিভিন্ন মাধ্যম ই-কার্ড করে দেয়ার নাম করে ৭ হাজার রিংগিত পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে, তাই কোনো এজেন্টের কাছে না গিয়ে নিয়োগকর্তা এবং অবৈধ শ্রমিককে সশরীরে যে কোনো স্টেট ইমিগ্র্যাশন অফিস থেকে ই-কার্ড নেবার জন্য আহবান জানান।
এই ই-কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের প্রায় দশ লাখ অবৈধ শ্রমিক নিবন্ধিত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।