শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

লিবিয়ায় এখন টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদে


Published: 2017-04-12 22:37:49 BdST, Updated: 2024-04-20 09:21:46 BdST

বিওয়াচ প্রতিবেদক: লিবিয়ায় এখন টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে  প্রবাসী বাংলাদেশিদের। আশির দশকে লিবিয়ায় বাংলাদেশিরা যেত সোনার হরিণের খোঁজে। কারণ সেসময়ে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা উপার্জন কোনো ব্যাপারই ছিল না লিবিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের  জন্য। ঐ সময়ের ৫০ হাজার টাকা এখন কার কয়েক লাখ টাকার সমান। এ ধারা অব্যাহত থাকে ২০১১ সাল পর্যন্ত।কিন্তু ২০১১ সালে লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর ভেঙে পড়ে দেশটির অর্থনীতি।প্রায় চার বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে উত্তর আফ্রিকার এ দেশটিতে, নেই একক কোন সরকারের নিয়ন্ত্রণ। যুদ্ধবিদ্ধস্ত লিবিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিসহ অন্য দেশের অভিবাসীরা চরম সংকটে দিন কাটাচ্ছে। একদিকে যুদ্ধের কারণে লিবিয়ার বৈদেশিক ও দেশীয় মুদ্রার রির্জাভ একেবারে শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেছে, আর অন্যদিকে একাধিক সরকার ব্যবস্থা, দখল-পাল্টা দখল, গোলাগুলি, হামলা ও সশস্ত্র ডাকাতদের আক্রমণ।

লিবিয়ায় ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশের আবুল খায়ের। তিনি জানান, লিবিয়াতে বাংলাদেশিদের জন্য এখনো কাজের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু  ডাকাতদের দৌরাত্মে এখন দেশটির কোনো ব্যাংকেই পর্যাপ্ত টাকা নেই। ফলে কাজের জায়গা থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা দিতে পারছে না। আবুল খায়ের বলেন, অনেক বাংলাদেশি কর্মী এখন বড় প্রতিষ্ঠান ছেড়ে ছোট দোকানে কাজ করছে। আবার অনেকে কাজ ছেড়ে নিজের জমানো টাকা খরচ করে দিন কাটাচ্ছে। এছাড়া, ডাকাতির ভয়ে সবসময় তটস্থ থাকতে হয়। যার কারণে, জমানো টাকা নিয়েও সবসময় ভয় আর  অনিশ্চয়তায় থাকতে হয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের।

লিবিয়ার স্থানীয় যেসব নাগরিকের কাছে প্রচুর অথ্র্ রয়েছে তাদের বেশিরভাগই ডাকাতির ভয়ে অন্যদেশে অর্থ সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে, দেশটির ব্যাংক ব্যবস্থা একেবারে ভেঙ্গে পড়ছে বলে জানান লিবিয়া প্রবাসী আবুল খায়ের। তিনি বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে পাড়ি দেওয়ার জন্য এখন বাংলাদেশিরা লিবিয়াতে যাচ্ছে, কাজের জন্য নয়। তবে অনেক বাংলাদেশি ইউরোপে যাওয়ার আশা নিয়ে লিবিয়াতে গেলেও প্রতারণার শিকার হয়ে সেখানেই দিনের পর দিন মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। যারা ইউরোপে যাওয়ার জন্য সেখানে যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগই অদক্ষ। যার কারণে তারা লিবিয়াতেও কোনো ভালো কাজ করতে পারছে না বলে জানান আবুল খায়ের। তিনি আরও জানান, দালালদের খপ্পরে পরে এক ভিসায় দশ-বিশজন করে লিবিয়াতে যাচ্ছে স্বপ্নের ইউরোপের মাটিতে পৌঁছতে। আবার অনেক বাংলাদেশি ভিসা ছাড়াই অবৈধপথে যাচ্ছে লিবিয়াতে, ফলে কোথাও কাজ করতে পারছে না তারা। আর পাসপোর্ট ভিসা না থাকায়  বাংলাদেশেও ফিরে যেতে পারছে না।

আবুল খায়ের বলেন, লিবিয়াতে যেসব বাংলাদেশিরা কাজ করছে তাদের অনেকেই দেশে টাকা পাঠাতে পারছে না। লিবিয়াতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় অধিকাংশ বাংলাদেশি সরাসরি বা সহজে দেশে টাকা পাঠাতে পারছে না।বাংলাদেশ দূতাবাস সর্ম্পকে তিনি বলেন, লিবিয়ার বর্তমান অবস্থায় দূতাবাস কর্মকর্তারাও প্রবাসীদের জন্য কোনো কাজ করে না । এছাড়াও তিনি বলেন, লিবিয়ায় যেসব বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়া কাজ করছে তাদের জরিমান করা হচ্ছে। এই লিবিয়া প্রবাসীর মতে, জরিমানার ক্ষেত্রেও দূতাবাসের উচিত দেশীয় মূদ্রায় জরিমানা করা, কিন্তু তা না করে তারা ডলারে জরিমানা করছে। ফলে ৫ গুন বেশি জরিমানা দিতে হচ্ছে এসব অবৈধ বাংলাদেশিদের। এছাড়া, টাকা পাঠানোর এই সমস্যা দূর করতে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসকে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান আবুল খায়ের।  এক্ষেত্রে, বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংককে লিবিয়ায় শাখা খোলার অনুমতি দেওয়া,  ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বা মানিগ্রামের মতো আন্তর্জাতিক মুদ্রা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের শাখা খোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশিদের রেমিটেন্স পাঠানোর সুবিধার্থে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে দূতাবাসেই ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বা মানিগ্রামের কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুরোধ জানান তিনি।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।