বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারি খাতের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ আবশ্যক: সালমান এফ রহমান


Published: 2019-04-28 19:33:20 BdST, Updated: 2024-04-18 23:23:36 BdST

বিজনেস ওয়াচ প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, বেসরকারি খাতের উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা আবশ্যক। তিনি বলেন, আমরা যেকোন ধরনের অর্থায়নের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল, কিন্তু এটা আমরা অনুধাবন করতে সক্ষম হইনি যে, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক যথোপযুক্ত উৎস নয়। দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে অতীতে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সেগুলো সফল্য নিয়ে আসতে পারেনি। এ জন্য তিনি পুঁজিবাজারে শক্তিশালী ও কার্যকর বন্ড মার্কেট চালু করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। গতকাল রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি অবকাঠামো উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান ‘গ্যারান্টকো’ যৌথভাবে আয়োজিত স্থানীয় পুঁজিবাজার অবকাঠামো অর্থায়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রাইভেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ (পিআইডিজি) এর চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু বেইনব্রিজ গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, অবকাঠামো খাতের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পখাতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এছাড়া পুঁজিবাজারের সূচকের উঠা-নামা স্বাভাবিক একটি ধর্ম। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গতিশীল বন্ড মার্কেট বিকাশের জন্য আমাদের পুঁজিবাজারকে অবশ্যই কার্যকর রাখতে হবে। উপদেষ্টা আরো বলেন, বর্তমানে আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। আমাদের বেসরকারিখাতকে এ বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে এবং কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, ‘বিগত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সবার কাছে উদাহরণস্বরুপ। এদেশ এখন দ্রুততম সময়ে বিকাশমান অর্থনীতির ৫টি দেশের মধ্যে অন্যতম। এই ধারা বজায় রেখে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮.১৩%। উন্নতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে বাংলাদেশের আধুনিক সময়ের ইকোনমিক পাওয়ারহাউজে পরিণত হওয়ার সক্ষমতা আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ ক্ষেত্রে অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমাদের দেশে অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের বিষয়গুলো অনেকটাই বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা (এডিপি) তথা সরকারি খাতের অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল। দ্রুততম সময়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভিষ্ট লক্ষ্যে যেতে হলে প্রয়োজন অবকাঠামোর সময়োপযোগী উন্নয়ন। ২০৩০ সালের মধ্যে অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের জন্য এ খাতে ৩২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমাদের জাতীয় বাজেটের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং বেসরকারিখাতকে অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন ডিসিসিআই সভাপতি। বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের জন্য ব্যাংকখাত যথোপযুক্ত উৎস নয়; বরং পুঁজিবাজার, বন্ড মার্কেট, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড এবং পেনশন ফান্ডের মতো বিবিধ উৎস এ ক্ষেত্রে মুখ্য চালিকাশক্তির ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার এবং সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন করা প্রয়োজন যাতে করে সকলের সমন্বয়ে অবকাঠামো খাতের অর্থায়ন সহজে করা যায়। এ বিষয়ে এই আন্তর্জাতিক সেমিনারটি থেকে অভিনব এবং সময়োপযোগী চিন্তা এবং পথ নির্দেশিত হবে বলে তিনি আশাবাদ করেন।

প্রাইভেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু বেইনব্রিজ বলেন, পরিণত এবং উন্নত বাজারে পুঁজিবাজার, বিশেষ করে বন্ড মার্কেট বিষয়টি অবকাঠামো উন্নয়নের অর্থায়নের অন্যতম উৎস। গ্যারান্টকো বাংলাদেশের বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের বিষয়ে নজির স্থাপনকারী গবেষণা ও কাজের মাধ্যমে অবকাঠামো খাতে অর্থায়নের জন্য একে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরতে পারবে।

গ্যারান্টকো’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লাসিথা পেরেরা সম্মেলনের একটি সেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, যে কোনো দেশের জন্য একটি টেকসই এবং যথাযথ অবকাঠামো থেকে উপকৃত হওয়ার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেই অবকাঠামোর জন্য অর্থায়নটিও যেন যথাযথ হয়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। গত কয়েক দশকে অগ্রগামী পুঁজিবাজারগুলোর উন্নয়নের জন্য সহায়তার কাজে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, দেশের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের ও পরিসরের উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারীরর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে অবকাঠামোর অর্থায়ন ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। এই বন্ড স্টাডির মাধ্যমে এক উন্নয়নের যাত্রায় প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হলো। বাংলাদেশের নীতি নির্ধারক, নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহ, বিনিয়োগকারী এবং স্পন্সরগণ গ্যারান্টকোর সাথে যৌথভাবে কাজের মাধ্যমে এই দেশের পুঁজিবাজারের প্রকৃত সক্ষমতা বুঝতে এবং অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য যথার্থতা নিরুপণ করবেন বলে আশা রাখা যায়।

 

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।