শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২০৪১ সালে ৫৫ লাখ মানুষের চাকুরী হারানোর আশঙ্কা রয়েছে: মুখ্য সচিব


Published: 2019-12-09 09:07:38 BdST, Updated: 2024-04-19 13:00:42 BdST


বিজসের ওয়াচ প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান বলেন, গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে শিল্পখাতের চাহিদা মাফিক দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে শিক্ষা কার্যক্রমে ও পাঠ্যসূচির প্রয়োজনীয় সংষ্কার এখন সময়ের দাবী। সারা পৃথিবী এখন নতুন নতুন তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে আসছে এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। এক্সসেস টু এনফরমেশন (এটুআই)-এর তথ্য মতে, অটোমেশনের কারণে বাংলাদেশে ২০৪১ সাল নাগাদ ৫টি খাতে মোট শ্রম বাজারে প্রায় ৪৭ শতাংশ অর্থ্যাৎ ৫.৫ মিলিয়ন (৫৫ লাখ) কর্মক্ষম মানুষ চাকুরী হারানোর শঙ্কায় রয়েছে। এ অবস্থা মোকাবেলায় আমাদের এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এজন্য কৃষি খাতের আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানের আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে গেষ্ট অফ অনার হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন তিনি। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি কামরান টি রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপন করেছে এবং বেসরকারিখাতেও পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপনের অনুমোদন প্রদান করছে।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে শ্রমভিত্তিক শিল্পখাতের জায়গায় তথ্য-প্রযুক্তি স্থান করে নিচ্ছে, যার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকোচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ অবস্থা মোকাবেলায় তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষাকার্যক্রম বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, বাংলাদেশের কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠীর পরিমাণ প্রায় ৬৩.৫ মিলিয়ন, যারা আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ৪র্থ শিল্প বিল্পরের সম্ভাবনা এবং অটোমেশনের কারণে নতুন কর্মসংস্থানের তৈরির সম্ভবনাকে সংকোচিত করছে। বাংলাদেশের মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ৬.৫৮ শতাংশ শিল্পখাতের সাথে জড়িত। বিশেষকরে দেশের তৈরি পোষাক খাত প্রায় ৩২.৫২ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। সামনের দিনগুলোতে তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক খাতই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। এলক্ষ্যে আমাদের এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। কারণ আমাদের শিল্পখাতে এখনই দক্ষ মানব সম্পদের অভাব রয়েছে। আমাদের প্রবাসীর প্রতিবছর ১৬.৪২ বিলিয়ন রেমিটেন্স পাঠানোর মাধ্যমে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, তবে ভারত, মেক্সিকো এবং ফিলিপাইনের মত দেশসমূহ অধিক দক্ষ কর্মী প্রেরণের মাধ্যমেঅধিক হারে রেমিট্যান্স আহরণ করছে। সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে হতে আরো দক্ষ কর্মী বিদেশের প্রেরণ এবং তরুণ শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করতে শিক্ষাকার্যক্রম আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করা একান্ত আবশ্যক।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন-এর সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, আমাদের বেসরকারি খাতে মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮০শতাংশ যোগান দিয়ে থাকে, তাই বেসরকারি খাতের চাহিদা মোতাবেক সরকারকে দক্ষতা উন্নয়নে কার্যক্রম গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানির প্রধান খাত তৈরি পোষাক খাত সহ অন্যান্য খাতের পণ্যের বহুমুখীকরনের উপর জোরারোপ করেন। তিনি আরো বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষনের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো দক্ষ মানব সম্পদ এবং এজন্য আমাদের বিদ্যমান কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন তরুণ জনগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই।
বিজেএমইএর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি ফয়সাল সামাদ, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান মোঃ মোশতাক হোসেন নির্ধারিত আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। বিসিক চেয়ারম্যান মোঃ মোশতাক হোসেন জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে বিসিক এর উদ্যোগে সারাদেশে ৫০টি শিল্প পার্ক স্থাপন করা হবে। বিজেএমইএ’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি ফয়সাল সামাদ তৈরি পোষাক খাতে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদেও লিডারশীপ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন করতে পারলে তারা প্রডাক্টশন ম্যানেজার/উচ্চতর পদগুলোতে কাজের সুযোগ পাবে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, গবেষণা ও উন্নয়নে সরকার এবং বেসরকারি খাতকে আরো বেশি হারে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-এর অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে তৈরি পোষাক খাতের প্রায় ৬০ শতাংশ কর্মসংস্থান অটোমেশনের আওতায় চলে আসবে। সারা পৃথিবীতে চতুর্থ শিল্প ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, যার ফলে সকল উৎপাদন খাত প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। এ শিল্প বিপ্লবের বিষয়টিতে আমাদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এটি আমাদের আরো বেশি হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে, তবে এজন্য আমাদের এখনই প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা-কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন, শিল্পখাতে বিদ্যমান কর্মীদের পুনঃদক্ষতা উন্নয়ন ও গবেষণা পরিচালনার আহ্বান জানান।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।