মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওষুধ থেকে হতে পারে কিডনি রোগ


Published: 2017-07-10 13:49:04 BdST, Updated: 2024-04-16 13:47:12 BdST

 বিজনেস ওয়াচ প্রতিবেদক: কিডনি রোগের সঙ্গে ওষুধের অনেকটা সংযোগ রয়েছে। এমনকি ওষুধ খেলে কিডনি তাৎক্ষণিক কাজ বন্ধ করে দিতে পারে, যাকে অ্যাকিউট রেনাল ফেইল্যুর এআরএফ বলে। ওষুধ খেলে যেমন কিডনি রোগ হতে পারে, তেমনি কিডনি অকেজো হয়ে গেলে ওষুধ সেবনেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সুতরাং ওষুধ সেবনের আগে ডাক্তার ও রোগীকে সতর্ক থাকা দরকার। যেমন ওষুধজনিত কিডনি রোগ হতে পারে, তেমন কিডনি রোগে ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কেও ধারণা থাকা প্রয়োজন। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।
ওষুধজনিত কিডনি রোগ:
প্রকাশিত বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ওষুধে শতকরা ৭-১০ ভাগ কিডনি তাৎক্ষণিক বিকল (এআরএফ) হয়ে যেতে পারে এবং শতকরা ৫-৭ ভাগ ধীর গতিতে কিডনি বিকল হতে পারে, যাকে বলে সিআরএফ। এর কারণ হচ্ছে বেরিভাগ ওষুধই কিডনি দ্বারা বের হয়ে যায়। সে জন্য তারা কিডনিকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ওষুধের জন্য বমি হয়ে রক্তচাপ কমেও কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
এ ছাড়া কিছু কিছু ওষুধের কারণে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি, কিডনির রক্তপ্রবাহ কমিয়ে, এমনকি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শূন্য করে বা সরাসরি কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যেমন ব্যথার ওষুধ বা এনএসএআইডি গ্রুপের ওষুধ প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ ব্যথা উপশমে ব্যবহার করে থাকে। অনেক সময় প্রস্রাব বেশি করার জন্য ফ্রুসেমাইড বা ডায়ইউরেটিকস অথবা পায়খানা করার ওষুধ খেয়ে শরীরের পানি, লবণ, পটাশিয়াম ও ক্ষারের তারতম্য করে আকস্মিক কিডনি ফেইল্যুর করতে পারে। এসব ওষুধের সঙ্গে যখন ব্যথা উপশমের ওষুধ দেওয়া হয় তখন কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
সচরাচর জীবাণুজনিত ইনফেকশনের কারণে যেসব অ্যন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে সালফোনামাইড, কোট্রাইমোক্সাজল, পেনিসিলিন ইন্টারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিস করতে পারে। এমনকি ব্যথার জন্য ব্যবহৃত অ্যাসপিরিন, ডাইকোফেনাক, আইব্রুফেন ইত্যাদি ইন্টারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিস থেকে শুরু করে এআরএফ করতে পারে। কিডনির ছাঁকনিকে নষ্ট করে নেফ্রাইটিস করতে পারে যেমন পেনিসিলামাইন, লেড, গোল্ড, মারকারি এবং আরসেনিক মিশ্রিত ওষুধ। জেন্টামাইসিন, কেনামাইসিন, সেফাললোসপরিন, রিফামপিসিন, এলুপিরিনল জাতীয় ওষুধ ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিডনিকে অকেজো করে ফেলতে পারে। আবার ২-৩ বছর ধরে প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, ফেনাসিটিন, ক্যাফিন জাতীয় ওষুধ একনাগাড়ে খেলে অথবা ১০-১৫ বছরে এক থেকে দুই কেজি এনালজেসিক সেবন করলে এনালজেসিক নেফ্রোপ্যাথি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। উন্নত বিশ্বে ১০-৩০ ভাগ ক্ষেত্রে ধীর গতিতে কিডনি অকেজো হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয়েছে। কিছুটা হলেও জানা গেল ওষুধজনিত কিডনি রোগ সম্বন্ধে। এবার দেখা যাক যার কিডনি ইতিমধ্যে অসুস্থ বা কিছুটা হলেও অকেজো হয়েছে তার জন্য ওষুধের প্রয়োগ ও প্রভাব কী রকম।
কিডনি রোগে ওষুধের ব্যবহার:
কিডনি অকেজো বা বিকল থাকলে ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কেননা, কিডনির কাজের মধ্যে অন্যতম হলো পরিপাকের পর শরীর থেকে ওষুধসহ অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় জিনিস প্রস্রাবের সাহায্যে নির্গত করা। কাজেই কিডনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন রক্তে ওষুধের অবস্থান স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় থাকতে পারে। এমনকি ওষুধ কিডনি থেকে বের হওয়ার পথে নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হয়। যার ফলে ওষুধ সেবন, মাত্রা ও ব্যবহারে অনেক পরিবর্তন আনতে হয়। রক্তে ইউরিয়া, ত্রিয়েটিনিন বেশি থাকলে বা কিডনি অকেজো হলে যেসব ওষুধের ব্যবহার নিষিদ্ধ যেমন: টেট্রাসাইক্লিন, কোট্রিমাজল, সালফোনেমাইড, নাইট্রোফুরানটয়িন, কেনামাইসিন, স্পাইরোনোল্যাকটন, স্ট্রেপটোমাইসিন, ডাইকোফেনাক, অ্যাসপিরিনি জাতীয় ওষুধ।
কিডনি অসুস্থ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক যেমন অ্যাম্পিসিলিন, অ্যামোক্সাসিলিন, সেফালোসপোরিন, সেফ্রাডিন, সিপ্রোফোক্সাসিন, জেন্টামাইসিন. কেনামাইসিন, যক্ষ্মার ওষুধ ইথামবুটল, এম্ফোটেরিসিন, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ কেপ্টোপ্রিল, এটেনোলল, এনালাপ্রিল, লিসিনোপ্রিল, সাইকোসপোরিন, সিসপ্লাটিন, কার্বোপ্লাটিন ইত্যাদি ওষুধ কম মাত্রায় ব্যবহার করতে হয়। ওষুধ যেমন রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়, তেমনি ওষুধের ব্যবহারে কিডনিসহ যে কোনো অঙ্গের ক্ষতিও হতে পারে। কাজেই ডাক্তার ও রোগী উভয়কেই এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে, যাতে ওষুধজনিত কিডনি রোগ না হয় এবং কিডনি রোগে ওষুধের ব্যবহারে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে অসুস্থ কিডনি আরও বেশি অসুস্থ না হয়।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।