শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৫ বছরে লাখ কোটি টাকা এসএমই ঋণ দেবে ব্র্যাক ব্যাংক


Published: 2023-01-26 02:17:05 BdST, Updated: 2024-04-20 10:51:59 BdST


নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যাংকিং-সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয় ২০০১ সালে। মূল প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ব্যাংকটি ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিংসেবার আওতায় আনার উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের সূচনা করে। ব্র্যাক ব্যাংকের ঋণ-গ্রহীতাদের প্রায় অর্ধেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, সংক্ষেপে যাদের বলা হয় ‘এসএমই’। এই ২১ বছরে ব্যাংকটি ১০ লাখ এসএমই গ্রাহককে ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের মাইলফলক অর্জন করেছে। আগামী পাঁচ বছরে ১০ লাখ নতুন গ্রাহককে আরও ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করবে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক। এক সাক্ষাৎকারে এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ব্যাংকটির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) অ্যান্ড হেড অব এসএমই সৈয়দ আব্দুল মোমেন।
এসএমই খাতকে ব্র্যাক ব্যাংকের অগ্রাধিকার দেয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বড় ব্যাংকগুলো দেশের স্বনামধন্য শিল্পপতিদের ঋণ বিতরণ করত। আমাদের দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হতেন না। স্যার ফজলে হোসেন আবেদ ব্র্যাক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছেন যেন এসব ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প উদ্যোক্তারা ব্যবসা-বাণিজ্য করার মাধ্যমে অর্থনীতিকে সচল রাখতে পারে। কারণ একটা দেশের অর্থনীতি সামনে অগ্রসর করার জন্য এসএমই খাতকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে জামানতবিহীন ঋণ পুরো খাতে প্রায় ৪০ শতাংশ ব্র্যাক ব্যাংক দেয়। ব্র্যাক ব্যাংক এসএমইকে সব সময় প্রাধান্য দিবে, ব্যাংকের বৈশিষ্ট্যই এটি। ব্যাংক খাতে নানা রকমের অনিয়ম সংঘটিত হয়। বিশেষ করে দেখা যায়, বেনামে ঋণ নেয়ার পর সেই টাকা আর ফেরত আসছে না। তবে ব্র্যাক ব্যাংকে এসএমই খাত থেকে অর্থ নিয়ে সেই টাকা ফেরত পাওয়া যায়নি এরকম ঘটনা ঘটেনি। বরং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা যে ঋণ নিয়েছেন তা সময়মতো ফেরত দিয়েছেন। আমাদের ব্যাংকের এসএমই খাতের কার্যক্রম অত্যন্ত স্বচ্ছ। ব্র্যাক ব্যাংক যখন যাত্রা শুরু করে তখন ঋণ দেয়ার জন্য আমানতের প্রয়োজন ছিল। তখন রিটেইল ব্যাংকিংব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। এরপর করপোরেট ব্যবসা চালু করা হয়। ধীরে ধীরে ব্র্যাক ব্যাংক আগের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে এসেছে।

তিনি জানান, দীর্ঘ সময় ধরে ১০ লাখ এসএমই গ্রাহককে ১ লাখ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে আরও ১০ লাখ গ্রাহককে ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি আমরা। তখন আমাদের মোট এসএমই গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়াবে ২০ লাখ। ঋণের অঙ্ক গিয়ে ঠেকবে দুই লাখ কোটি টাকা।

তিন আরো জানান, জামানতবিহীন ঋণে ব্র্যাক ব্যাংক দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক। জামানতবিহীন ঋণ বিতরণ করায় ব্র্যাক ব্যাংক সবচেয়ে বেশি সাফল্য দেখিয়েছে। ২১ বছর ধরে নানা রকমের মডেল তৈরি করা হয়েছে। এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। আর এই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে এসএমই খাত নিয়ে কাজ করছে ব্র্যাক ব্যাংক। যারা ঋণ বিতরণ করছেন তাদের ট্যাব দিয়ে দেয়া হবে। ফলে তাদের ঋণ বিতরণ কার্যক্রম আগের চেয়ে সহজ হবে। একজন গ্রাহক যখন ব্র্যাক ব্যাংকে ঋণ চায়, আর ব্যাংক থেকে গ্রাহককে ঋণ বিতরণের কার্যক্রমে প্রায় ১৫ দিনের মতো সময় লেগে যায়। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ৫ দিনের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হবে। ব্র্যাক ব্যাংক গ্রাহকদের অতীত তথ্য বা রেকর্ড পর্যালোচনা করে ঋণ বিতরণ করে। ব্যাংকের শুরু দিকে ১৫ লাখ টাকার ওপর জামানতবিহীন ঋণ দেয়া হতো। এটি দুই কোটি টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়। গড়ে ১৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়।

শুধু তাই নয় সব সময় নারীদের প্রাধান্য দেয় ব্র্যাক ব্যাংক। তাই এসএমই ব্যাংকিং নারী উদ্যোক্তাদের জন্যেও নানা সুবিধা নিয়ে আসছে তারা। যখন কোনো নারী ব্র্যাক ব্যাংকে একটি ক্রেডিড কার্ড অ্যাকাউন্ট খুলবে তখন তাদের ‘তারা’ অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া হবে। এই ‘তারা’ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই তারা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে। নারীদের সব সময় একটা বিশেষ গুরুত্ব দেয় ব্র্যাক ব্যাংক। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পুরো বছর ব্যাংকের পক্ষ থেকে নানা রকমের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ফলে অনলাইনে ব্যবসা থেকে শুরু করে নানা রকম কার্যক্রমে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন তারা।

তিনি আরো জানান, এসব কাজে এজেন্ট ব্যাংকিং, উপশাখা, এমএফএস, এসএমই ব্যাংকিং আমাদেও দারুনভাবে সাহায্য করছে। আমাদের ৯০০ এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট। উপশাখার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ৪০০টির মতো করার পরিকল্পনা রয়েছে। শাখা আছে ১৮৭টি। এসএমই গ্রাহকদের শুধু ঋণ বিতরণ নয়, ব্যাংকিং কাজের সব কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।

সূত্র : দৈনিক বাংলা

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।