বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অটোমেশনের মাধ্যমে বীমা খাতে সুশাসন  নিশ্চিত করা হবে : গকুল চাঁদ দাস


Published: 2019-10-31 11:28:32 BdST, Updated: 2024-04-24 12:10:33 BdST

বীমাখাতে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে নানা অনিয়ম। গ্রাহকের আস্থার অভাব রয়েছে এই খাতে। অথচ অর্থনীতির বড় একটা খাত বীমাখাত। কোম্পানীগুলোর অসুস্থ প্রতিযোগিতা, সময় মতো বীমাদাবি পূরণ না করা, জবাবদিহিতার অভিযোগ রয়েছে। এ সব কারণে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও শৃংখলা ফেরাতে বীমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) নানা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এসব নানা বিষয় নিয়ে বিজনেস ওয়াচের সাথে কথা বলেছেন আইডিআরএ এর সদস্য গোকুল চাঁদ দাস। সাক্ষাতকার নিয়েছেন টুটুল রহমান। সাক্ষাতকারের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-

বিজনেস ওয়াচ : বীমাখাতের শৃংখলা আনতে কি ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে আইডিআরএ?

গকুল চাঁদ দাস : বীমাখাতে শৃংখলার অভাব আছে এ কথা সত্য। মানুষের আস্থার অভাব রয়েছে। এটা একদিনে তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এগুলো দুর করার জন্য আইডিআরএ গঠন করা হয় এবং নানা মুখী পদক্ষেপ নেয়া হয় মানুষের আস্থা-বিশ্বাস ফেরাতে। এটা সময় লাগবে। এত দ্রুততার সাথে করা যাবে না। বীমাখাত আর্থিক খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণখাত। এই খাতে দক্ষলোকের দারুন অভাব রয়েছে। শিক্ষিত যারা আছেন আমরা এখন পর্যন্ত তাদেরকে পারি নাই এখাতে আকৃষ্ট করতে। এরমূল কারণ হলো তাদের বেতন কাঠামো তৈরি করা যায়নি। দক্ষ লোকবল আমরা তৈরিও করতে পারি না। আপনারা জানেন বীমাখাতে গুরুত্বপূর্ণ পদ হচ্ছে অ্যাকচুয়ারি। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা পর্যাপ্ত পরিমানে  অ্যাকচুয়ারি তৈরি করতে পারি নাই।  যে কয়েকজন আছেন তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে অ্যাকচুয়ারি সায়েন্সে পড়াশুনা করেছেন। তরুন প্রজন্ম যারা অ্যাকচুয়ারি সায়েন্সে পড়ালেখা করে তারা আসলে দেশে থাকতে চায় না। তারা বিদেশেই পড়াশুনা করে বিদেশেই থাকে। কারণ ওখানে সুযোগ সুবিধা রয়েছে। অ্যাকচুয়ারি করার পর কেউ বেকার থাকে না। তাদের ডিমান্ড বেশি। সে তো শুধু বীমাখাতে কাজ করবে না, ব্যাংকিংখাতে কাজ করাসহ বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার সুযোগ তার রয়েছে। তাছাড়া এখানে বেতনও কম।  এসব কারণে আস্থার অভাব রয়েছে। আবার ক্লেইম সেটেলমেন্টও দুর্বল একটা ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা বীমার পলিসি না বুঝেই সাক্ষর করে থাকি। পলিসির মধ্যে যে শর্তাদি আছে তা পরিপালন করি না। শর্তাদি পড়ি না। না পড়ে আমি যখন শেষে ক্লেইমের জন্য যাই, তখন দেখা যায় আমি কিছুই পাচ্ছি না। এটা পলিসি সম্পর্কে অজ্ঞতা। আবার ক্ষুদ্রবীমা বা মাইক্রো ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রেই এই ঘটনাটা ঘটে থাকে। মাইক্রো ইন্স্যুরেন্সের প্রতি মানুষের আকর্ষনটা বেশি। কারণ এটা কম টাকা দিয়ে ইন্স্যুরেন্স পলিসি করা যায়।  এবং কম টাকা দিয়ে পলিসি করার পর আপনি যদি ইন্স্যুরেন্স না চালান তাহলে কিন্তু আপনি বিনিময়ে কিছুই পাবেন না। অন্তত সেটা দুই বছর আপনাকে চালাতে হবে। আবার দুই বছর চালাতে গেলে এজেন্টের একটা বিষয় আছে। এক বছরে এজেন্ট যে হারে কমিশন পাবে, পরের বছরে সেই হারে সে কমিশন পাবে না। এ কারণে দ্বিতীয় বছরে অনেক এজেন্টকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কমিশন কমে যাওয়ার কারণে এজেন্টের আর আগ্রহও থাকে না। এটাকে রোধ করার জন্য সহায়তা করতে পারে অটোমেশন। যদি আমরা অটোমেটেড পদ্ধতিতে তার টাকা পয়সা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে পারি, তাহলে হয়তো আমাদের পরিস্থিতির কিছুটা চেঞ্জ আসতে পারে। আমরা সেটা করার চেষ্টা করছি। এতে তার বীমা মেচুউড হলে এবং তার প্রিমিয়াম দেয়ার সময় হলে একটা ম্যাসেজ দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে।

বিজনেস ওয়াচ : আইডিআরএ আর্ন্তজাতিক সংস্থার সদস্য হওয়ায় লাভ কি হয়েছে?

গকুল চাঁদ দাস : পৃথিবীতে যদি আপনি ব্যবসা করতে যান তাহলে আন্তর্জাতিকতার দরকার আছে। ইন্স্যুরেন্স ব্যবসাটা মূলত রি-ইন্স্যুরেন্সের ওপর নির্ভর করে। যেমন ধরেন পদ্মা ব্রিজ। এটি হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এর ইন্স্যূরেন্স সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সাথে। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন এই ইন্স্যূরেন্সটা পাওয়ার সাথে সাথেই এটা

রি-ইন্স্যুরেন্স করার চিন্তা করবে। বিমানের ক্ষেত্রেও তাই। বোয়িংয়ের ইন্স্যুরেন্স সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সাথে। তারা আবার বিদেশীদের সাথে রি-ইন্স্যুরেন্স করে। ইন্স্যুরেন্স মানেই হলো অনেকটা কো-অপারেটিভের মতো। একের বোঝা দশের লাঠি। বিদেশীরাও আবার রি-ইন্স্যুরেন্স করছে  আরেক জনের সাথে। এতে রিস্ক শেয়ার হয়ে যাচ্ছে। এখন এই রিস্ক শেয়ারিংয়ের ব্যাপার থেকেই আমি বলবো যে, আর্ন্তজাতিকতার প্রয়োজন আছে। এই আন্তর্জাতিকতা ছাড়া ইন্সুরেন্স ব্যবসরা করা সম্ভব না। আমরা যেদিন থেকে আইডিআরএ গঠন করেছি তার পর থেকেই ইন্স্যূরেন্সের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টরন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্স্যুরেন্স সুপারভাইজারে সদস্য হয়েছি। এটা হলো ব্যাংকিংয়ে বলা হয় ব্যাসেল। এটা সুইজারল্যান্ডের একটা জায়গা ব্যাসেল। ওখানে ব্যাংকিংয়ের এই সংস্থাটি রয়েছে। ইন্স্যুরেন্সেরই ওই একই নগরীতে। তাদের কিছু কাইট্যারিয়া আছে , তাদের কিছু নীতিমালা আছে। ওই নীতিমালা আমাদের মেনে চলতে হয়। প্রতি বছর এখানে কনফারেন্স হয়। নানা সুপারিশ মালা করা হয়। সেগুলো আমাদেরও দেয়া হয় বাস্তবায়নের জন্য।

বিজনেস ওয়াচ :  নতুন প্রকল্প তৈরির বিষয়ে কোনো উদ্যোগ আছে কিনা? শরীরের বিভিন্ন অংশের বীমা করার উদ্যোগ আছে কিনা?

গকুল চাঁদ দাস : আমরা হলাম রেগুলেটর এবং ডেভলপমেন্টে কাজ করি। প্রোডাক্ট তৈরি করে ইন্সুরেন্স কোম্পানীগুলো। তারা প্রোডাক্টটা তৈরি করে আমাদের কাছে পাঠাবেন অনুমোদনের জন্য। আমরা তখন দেখবো এটা অনুমোদনের যোগ্য কিনা। যদি অনুমোদনযোগ্য হয় তাহলে আমরা সেটা অনুমোদন করবো। প্রোডাক্ট ডেভলপমেন্টটা সরাসরি রেগুলেটরের কাজ নয়। তবে প্রোডাক্ট ডেভলপ না করলেও এ জন্য সব ধরনের উৎসাহ বীমাকারী বা বীামা কোম্পানীকে দিয়ে থাকি।

আপনি যেটা বলছে শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গ যেমন, চোখ, কান, হাত পা। এধরনের প্রোডাক্ট  আমাদের দেশে এখনো হয় নাই। বাংলাদেশে লাইফ ইন্স্যুরেন্স বা বডির ইন্স্যুরেন্স যেটা ওইটা চালু আছে। যেমন ধরেন একজন আর্ন্তজাতিক মানের খেলোয়ার। উনি একটা পা ইন্স্যুরেন্স করে রাখেন। হাজার কোটি টাকার ইন্স্যুরেন্স করে রাখেন তারা। আমাদের তো সেই ধরনের ব্যক্তিত্ব তৈরি হয় নাই। যেমন আমাদের ক্রিকেট টিম  যেটা তাদের বিভিন্ন ইন্স্যূরেন্স করা আছে।

বিজনেস ওয়াচ : সুশাসনের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ কি?

গকুল চাঁদ দাস : অটোমেশন একটা বড় ধরনের পদক্ষেপ। আমরা অটোমেশনের মাধ্যমেই সুাশাসনটা করতে চাই। পৃথিবীতে নিয়ন্ত্রন করার কনসেপ্টটা একটু বেকডেটেট। ডেভলপমেন্টের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করার কনসেস্টটাই চলে আসছে। সুশাসনের জন্য আমাদের প্রথম যেটা সেটা হলো গ্রাহকের দাবি পরিশোধ। আমরা এটার ওপরে বেশি জোর দিচ্ছি। আমরা চাই গ্রাহকের দাবি পূরনের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক ভাবে সভা করে জনসম্মুখে দাবিটা পরিশোধ করুক। জন সম্মুখে দাবি পরিশোধ করলে মানুষ আকর্ষিত হবে ইন্স্যুরেন্সের প্রতি। আরেকটা দিক হলো পুরো বীমাদাবি না পেলে জনসম্মুখে অভিযোগ করার সুযোগ পাচ্ছে। সুশাসনের এটা একটা দিক। আরেকটা হলো প্রচার। ইন্স্যুরেন্সের প্রচারের দিকেও আমরা আগ্রহী। মিডিয়ায় যারা কাজ করে তাদের বলবো আপনার মানুষ যেন জেনেবুঝে পরিসি করে সে ব্যাপারে প্রচার করুন।

 

বিজনেস ওয়াচ : ইন্স্যুরেন্সের পলিসির শর্তগুলো সংক্ষিপ্ত করা বা ইংরেজি করা যায় কিনা?

গকুল চাঁদ দাস : এটা একটা ভালো প্রশ্ন করেছেন। আর্ন্তজাতিকতার কিন্তু একটা বিণষয় আছে। এই ইন্স্যুরেন্সটা কিন্তু আবার রি-ইন্স্যুরেন্স করতে হয়। রি-ইন্স্যুরেন্সের সময় আমি বাংলা দলিলটা আমি পাঠাতে পারবো না। সাধারণ মানুষ আবার এটা বুঝবে না। এর জন্য আজ থেকে দেড় বছর আগে আমরা একটা নির্দেশনা সব ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর কাছে পাঠিয়েছি। সেটা হলো পলিসি ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় করতে হবে। অনেক কোম্পানী ইতোমধ্যে এটা বাস্তবায়ন করেছে।

বিজনেস ওয়াচ :  ব্যাংকিংখাতে কয়টি  চেক ক্লিয়ার হলো সেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে একটা ডাটাবেজ থাকে। ইন্স্যুরেন্সে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম আছে কিনা?

গকুল চাঁদ দাস : না। আমাদের এ ধরনের  কোনো কার্যক্রম এই মুহুর্তে নেই।  তবে আমাদের পরিকল্পনায় আছে। বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় এখানে  ৬৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। সেখানে অটোমেশন রয়েছে। সেই অটোমেশনের অন্যতম একটা ইন্স্যুরেন্স সিস্টেম। বিশ্বব্যাপী এই সিস্টেম ব্যবহার হয়ে থাকে। সেটা আমরা কিনবো। এটা হলে আমরা প্রতিদিন সারা দেশে কতটা পলিসি ইস্যু হয়েছে, কভার নোট ইস্যু হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো আমরাও জানতে পারবো। এটা করার আগে আমরা জানতে চাইবো কার কি অবস্থা। এই সলিউশন আসার পর আমরা তাদেরকে একটা সময় দেবো যে তোমরা এই সলিউশনের সাথে যুক্ত হও। আমাদের এই প্রজেক্টটা শেষ হবে ২০২২ সালে। তবে আশা করছি ২০২২ সালেই আগেই  আমরা এই সলিউশনটা কিনতে পারবো।

বিজনেস ওয়াচ : উন্নয়নে কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে?

গকুল চাঁদ দাস : পদক্ষেপ হচ্ছে অটোমেশন, গ্রাহকের আস্থা বাড়ানোর জন্য প্রচার-প্রচারণা বাড়ানো। আমরা সম্প্রতি নন লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে অত্যধিক হারে কমিশন একটা বিষয় ছিল। আমরা সেটা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তাতে মার্কেট অনেকটাই কারেক্টেড। তবে আরো কিছুদিন পর বিষয়টা পরিস্কার হবে। বিচ্ছিন্ন অভিযোগ আসছে আমাদের কাছে সেই অভিযোগ আমরা সরেজমিনে তদন্ত করে  দেখবো।

বিজনেস ওয়াচ : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

গকুল চাঁদ দাস :  আপনাদের ধন্যবাদ।  

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।