03/11/2025
Aminul Islam
2017-05-16 07:50:01
বিওয়াচ প্রতিবেদক: আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটেও শিল্পের উন্নয়নে গ্যাস, বিদ্যুত্ ও অবকাঠামো খাতকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। এক সাক্ষাত্কারে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাশেম খান এ কথা বলেন। সাক্ষাতকারে তিনি আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে সেক্টরভিত্তিক কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলেন, বাজেটে শিল্প ও জিডিপির হার ২৯ শতাংশ থেকে ৩৩ শতাংশ করা,শিল্প কর্মসংস্থানের হার ১৮ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি, এছাড়া শিল্পনীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জ্বালানি, বিদ্যুত্ ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নকে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। আয়কর, আইন ও বিধির বিষয়ে তিনি বলেন, পারকুইজিট সীমা সাড়ে চার লাখ থেকে বাড়িয়ে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত করা দরকার। নন-ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে লেনেদেন ৫০ হাজারের পরবর্তে এক লাখ টাকা করা এবং নগদ যানবাহন ভাতা ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত সুবিধা প্রদান করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যক্তি শ্রেণির করহারের সীমা প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে শূন্য শতাংশ, পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ১০ শতাংশ, সাত লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ১৫ শতাংশ, ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ২০ শতাংশ এবং এর বেশি আয়ে ২৫ শতাংশ করা প্রয়োজন। এছাড়া নারী ও বয়স্ক (৬৫ বছর) করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা, প্রতিবন্ধী করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা দরকার। আবুল কাশেম খান বলেন, বড় ব্যবসায়ীদের বর্তমানে টার্নওভার ট্যাক্স লিমিট ৮০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, খুচরা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক টার্নওভার শূন্য থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাটমুক্ত ও ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৩ শতাংশ করা হোক। এছাড়া প্রত্যেক ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন হোল্ডারদের সরকারি খরচে ইসিআর মেশিন স্থাপনসহ ভ্যাট স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করতে হবে।
তিনি বলেন, নিট সম্পদের মূল্য সারর্চাজের হার পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত শূন্য শতাংশ, ৫-১৫ কোটি টাকা মধ্যে ১০ শতাংশ, ১৫-২৫ কোটি টাকার মধ্যে ১৫ শতাংশ, ২৫-৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ২০ শতাংশ এবং ৩৫ কোটি টাকার বেশি হলে ২৫ শতাংশ রাখা দরকার। এছাড়া অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ মোট জিডিপি-বিনিয়োগের অনুপাত ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করতে হবে। আগামী অর্থবছরে বাজেট এডিপিতে বরাদ্দ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা বাড়ানো দরকার। নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে তিনি বলেন, নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) আইনের আওতায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হলে মুদ্রাস্ফীতি হতে পারে।
নতুন ভ্যাট অাইন নিয়ে বলেন, আমরা চাই ভ্যাট আইন আসুক। ভ্যাট আইনে অনেক ভালো কিছু বিষয় আছে। তবে আমরা ব্যবসায়ীরা দাবি করেছি, ভ্যাটের হার যেন ৭ শতাংশ হয়। তিনি বলেন, আমরা ৭ শতাংশ ভ্যাট চাই। কারণ, আমরা আশঙ্কা করছি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকরে মুদ্রাস্ফীতি হতে পারে। সবক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর হলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। যেমন-রড কিংবা ভোজ্য তেলের ওপর এখন ভ্যাট নেই। নতুন আইনে ভ্যাট কার্যকর হবে। আর দ্রব্যমূল্য বাড়লে চাহিদা কমে যেতে পারে। এর প্রভাবে উত্পাদনকারী তার উত্পাদন কমিয়ে দেবে। এতে অর্থনীতির পরিসর অপেক্ষাকৃত ছোট হতে পারে। এজন্য আমরা ৭ শতাংশ ভ্যাটের দাবিতে শেষ পর্যন্ত ফাইট করব। তিনি বলেন, মোট দেশজ উত্পাদনে (জিডিপি) ৩০ শতাংশের বেশি অবদান রাখে অতিক্ষুদ্র এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) খাত। বেসরকারি খাতের ৭৫ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই ক্ষুদ্র ও মাঝারি। দেশের কর্মসংস্থানের ৭৫ শতাংশ হয় এমএসএমই খাতে। শিল্প খাতের চাকরির ৮০ শতাংশই এমএসএমইভিত্তিক। অথচ নতুন ভ্যাট আইনে খুচরা পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ফলে এসএমই ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, নিট সম্পদের ওপর আরোপিত সারচার্জের হার ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করছি। এ ছাড়া নন-পাবলিক ট্রেডেড কোম্পানির করপোরেট করহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব, পাবলিক ট্রেডেড কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে আমাদের। মার্চেন্ট ব্যাংকের ক্ষেত্রে করপোরেট করহার অন্যান্য লিমিটেড কোম্পানির মতো সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষেত্রে করপোরেট করহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩২ শতাংশ ও কোম্পানির লভ্যাংশ আয়ের ওপর আরোপিত করহার ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।