শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মার্ক বিডির শেয়ার কেলেঙ্কারিতে তিন আসামির গ্রেফতারি পরোয়ানা


Published: 2017-02-12 03:52:11 BdST, Updated: 2024-04-20 00:19:08 BdST

গতকাল মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির (মার্ক বিডি) শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে বাদী ও সাক্ষীকে আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন রাজধানীর হাউজ বিল্ডিং ফিন্যান্স ভবনে স্থাপিত বিশেষ আদালত।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, নিম্ন আদালত থেকে স্থানান্তরের পর গতকাল চার্জ গঠন শেষে এ আদেশ দেন বিচারক আকবর আলী শেখ। আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় মামলার আসামি মার্ক বিডির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমাম মুলকুতুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল হাই এবং পরিচালক সালমা আক্তারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন তিনি। আর মামলার বাদী বিএসইসির উপপরিচালক এএসএম মাহমুদুল হাসান ও সাক্ষী তত্কালীন নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার উল কবির ভূঁইয়াকে আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্যও সমন জারি করেন আদালত।

মামলায় বাদীপক্ষের প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা বণিক বার্তাকে বলেন, মার্ক বিডির মামলাটি নিম্ন আদালতে থাকাকালীন আসামিরা জামিনে মুক্ত ছিলেন। ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের পর শুনানি ও গতকালের চার্জ গঠনের সময় আদালতে উপস্থিত না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আগামী ৯ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে আসামিরা আত্মসমর্পণ না করলে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।

এর আগে মার্ক বিডির শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলাটি গত ৬ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। ট্রাইব্যুনালে মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে চার্জ গঠনের বিষয়ে শুনানির জন্য ২৮ নভেম্বর পূর্বনির্ধারিত তারিখ ছিল। ওইদিন চার্জ গঠনের জন্য আদালতের কাছে সময় চেয়ে আবেদন করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ৯ জানুয়ারি চার্জ গঠনের দিন ধার্য করলে ওইদিনও ফের সময় চেয়ে আবেদন করে বিএসইসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল নির্ধারিত দিনে চার্জ গঠন করেন আদালত।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের নামে আসামিরা ১৯৯৬ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত প্রসপেক্টাসে কোম্পানির অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিষয়ে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শতভাগ প্রিমিয়ামে শেয়ার কিনতে প্রলুব্ধ করেন। প্রসপেক্টাসে আইপিও তহবিলের ব্যবহার সম্পর্কে যে অঙ্গীকার করেছে, তাও পালন করা হয়নি। অস্তিত্বহীন প্লান্ট এবং মেশিনারিজকে কোম্পানির সম্পদ হিসেবে দেখানো এবং মালিকানাধীন প্লান্ট ও যন্ত্রপাতির মূল্য বেশি দেখিয়ে প্রসপেক্টাস তৈরি করেছেন আসামিরা। কোম্পানির প্রসপেক্টাস অনুযায়ী সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (তত্কালীন) যে শর্তের অধীনে শতভাগ প্রিমিয়ামে শেয়ার বিক্রির সম্মতি দিয়েছিল, পরবর্তীতে তাও পরিপালন করেনি কোম্পানিটি।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ২১ ধারার ক্ষমতাবলে উল্লিখিত অভিযোগ তদন্ত করতে ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে একটি কমিটি গঠন করে কমিশন। কমিটির তদন্তের ভিত্তিতে প্রাথমিক সত্যতা পেলে বুয়েট কনসালট্যান্টের মাধ্যমে ওই প্রতিবেদনের তথ্য ও কোম্পানির কারখানার বিষয়াদি যাচাই করে অভিযোগের সত্যতা পায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ১৭ (ক-ঘ) ধারার লঙ্ঘন ও ২৪ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

পরবর্তীতে ২০০০ সালে মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিটিসহ চারজনকে আসামি করে মামলা করে কমিশন। কমিশনের পক্ষে সংস্থার তত্কালীন উপপরিচালক আহমেদ হোসেন মামলাটি দায়ের করেন। সিকিউরিটিজ অধ্যাদেশ এর ২৫ ধারা অনুযায়ী এ মামলা করা হয়। এ মামলায় সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন বিএসইসির তত্কালীন উপপরিচালক আহমেদ হোসেনসহ ছয় কর্মকর্তা। অন্যরা হলেন— ওই সময়ের নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার উল কবির ভূঁইয়া, পরিচালক ফরহাদ আহমেদ, উপপরিচালক এ টি এম তারিকুজ্জামান, উপপরিচালক শুভ্রকান্তি চৌধুরী ও উপপরিচালক সৈয়দ শফিকুল হোসেন।

প্রসঙ্গত, শেয়ারবাজার-সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ২০১৫ সালের জুনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম শুরু করেন। বিশেষ এ আদালতে মার্ক বিডিসহ এ পর্যন্ত নিম্ন আদালত থেকে মোট ২৩টি মামলা স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায় স্থানান্তর হওয়া মামলার মধ্যে ১০টির বিচারিক কার্যক্রমই শুরু করতে পারেননি ট্রাইব্যুনাল। আর বিচারিক কার্যক্রম শুরুর পর হাইকোর্টের নির্দেশে আরো তিনটি মামলায় স্থগিতাদেশ আসে। অন্যদিকে পাঁচটি মামলায় রায় হয়েছে। এর বাইরে দুটি মামলা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফেরত পাঠিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। মার্ক বিডি ছাড়া বর্তমানে বিচারিক কার্যক্রম চলছে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ মামলার, যার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।