শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেশি দামে গম আমদানি জনস্বার্থ পরিপন্থি : টিআইবি


Published: 2022-09-19 23:15:17 BdST, Updated: 2024-04-19 16:59:50 BdST


নিজস্ব প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে রাশিয়া থেকে সরকার পাঁচ লাখ টন গম আমদানি করছে অভিযোগ তুলে এটিকে জনস্বার্থ পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেছে দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি)। একই সঙ্গে রাশিয়ার আরেক কোম্পানি গ্যাজপ্রমকে ‘তিনগুণ বাড়তি ব্যয়ে ভোলায় তিনটি গ্যাসকূপ খননের কাজ দেওয়ার’ অভিযোগ করে এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। রোববার সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, অভূতপূর্ব চলমান আর্থিক সংকটের এই সময়ে গণখাতের ক্রয় আইন ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পরিপত্র লঙ্ঘন করে একই মধ্যস্বত্বভোগীকে অবৈধভাবে মুনাফার সুযোগ দিয়ে রাশিয়া থেকে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে গম আমদানির সিদ্ধান্ত এবং তিন গুণ বাড়তি ব্যয়ে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে ভোলায় তিনটি গ্যাসকূপ খননের চুক্তি জনস্বার্থ পরিপন্থি। একই সঙ্গে টিআইবির অভিযোগ, উভয় ক্ষেত্রেই একটি অসাধু স্বার্থান্বেষী ও সুযোগসন্ধানী চক্রকে সুপরিকল্পিতভাবে অনৈতিক ও অতিমুনাফা অর্জনের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে বিশ্ববাজারে গমের দাম ৪৩৮ ডলারে উঠলেও অগাস্টের শেষে তা ১০০ ডলার কমে ৩৩৮ ডলারে নেমে আসে। বিশ্ববাজারে গমের দাম নিম্নমুখী বলেও জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যমটি।

এদিকে গত ৩১ অগাস্ট সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে রাশিয়া থেকে প্রতিটন ৪৩০ ডলারে পাঁচ লাখ টন গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল বারিক। বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “কোভিড-১৯ এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক খাদ্য ও জ্বালানির বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তা দেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী সংকট তৈরি করেছে, যা মোকাবিলায় সরকার আর্থিকখাতে নানাবিধ বিধি-নিষেধ আরোপের পাশাপাশি রাজস্ব ব্যয়ের ক্ষেত্রে যৌক্তিভাবে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি গ্রহণ করেছে। সেই একইসময়ে বিদ্যমান আইন অমান্য করে আন্তর্জাতিক চলতি বাজার মূল্য থেকে অনেক বেশি দামে খাদ্যপণ্য আমাদানিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত প্রডিনটর্গকে কার্যাদেশ দেওয়ার ঘটনায় আমরা হতবাক হয়েছি। তারচেয়েও বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, মাত্র ১ লাখ টন গম চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়া প্রতিষ্ঠান, কোন যাদুবলে ৫ লাখ টন গম সরবরাহের কাজ পেল? আবার খাদ্যপণ্য আমদানির সাথে সংশ্লিষ্ট না হয়েও কীভাবে তৃতীয় একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সরকারি পর্যায়ের ক্রয় প্রক্রিয়ায় মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে জড়িত হবার সুযোগ পেল? এমন প্রশ্ন তুলে টিআইবির বিবৃতিতে বলা হয়, “সঠিকভাবে বাজার যাচাই না করেই কীভাবে বাড়তি দামে গম কেনার সিদ্ধান্ত হল এবং এই ক্রয় পরিকল্পনা দ্রুততার সাথে অনুমোদন পেল? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা জরুরি।“

সরকারি পর্যায়ে ক্রয় প্রক্রিয়ায় বেসরকারি তৃতীয় কোনো পক্ষের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই দাবি করে বিবৃতিতে দাবি করা হয়। গমের বাড়তি দামের কারণেই সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য একটি দেশ রাশিয়ার খাদ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রডিনটর্গের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম যখন কমছে, তখন বাড়তি দামে একই প্রডিনটর্গের সঙ্গে চুক্তির পেছনে মধ্যস্বত্বভোগীসহ সংশ্লিষ্ট একশ্রেণির সুবিধাভোগী চক্র যে যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, তা সহজেই বোধগম্য। অপরদিকে জ্বালানি নিরাপত্তার নামে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স আবিষ্কৃত ভোলার গ্যাস ফিল্ডে তিনটি নতুন কূপ খননের জন্য প্রতিটি কূপের ক্ষেত্রে বাপেক্সের ৮০ কোটির বিপরীতে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে ২৪০ কোটি টাকায় চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক গ্যাজপ্রমের সঙ্গে এ চুক্তি জনস্বার্থে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।