শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

লাল ফিতার দৌরাত্ম সরিয়ে দেওয়া হবে: প্রধানমন্ত্রী


Published: 2023-03-12 21:24:33 BdST, Updated: 2024-04-20 22:22:50 BdST


নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এবং স্থানীয় বেসরকারি বিনিয়োগ উভয়ের জন্য ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এখন বাংলাদেশের জাতীয় ব্যবসায়িক পরিবেশ কর্মসূচি ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম’ (বিআইসিআইপি) বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় আগামী ৫০ সপ্তাহে ৫০টি সংস্কার এবং আগামী তিন বছরে ১০০টি বিনিয়োগ পরিবেশ সংস্কার করা হবে। তিনি বলেন, ‘যেন ওই লাল ফিতার দৌরাত্ম না থাকে, সেটা সরিয়ে দেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত হবে, সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়ন হবে।’ শনিবার (১১ মার্চ) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এই সম্মেলন হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সহযোগিতায় (বিডা) এফবিসিসিআই এই সম্মেলনের আয়োজন করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কতৃর্পক্ষ ‘বেজা’ ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় শক্তিশালী রফতানি কৌশল এবং শিল্পনীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যা শিল্পের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি চমৎকার নীতি নির্দেশনাও প্রদান করবে। বছরে সবার সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়সমূহ এবং বাণিজ্য সংহতকরণ বাংলাদেশকে গত ১০ বছরে গড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি অর্জনে সহায়তা করেছে। এমনকি কোভিড-১৯ আঘাত হানার ঠিক আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। মাথাপিছু আয় মাত্র এক দশকে তিনগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে। জিডিপি’র আকার ২০০৬ সালের ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বর্তমানে ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে।

কোভিড-১৯ এর অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বমন্দার আঁচ না এলে এরমধ্যে আরও দুই থেকে তিন ভাগ দারিদ্র হ্রাস সম্ভব হতো বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। এজন্য ব্যক্তিখাতে ভোগ বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ, শক্তিশালী গ্রামীণ অর্থনীতি, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি, গ্রামীণ ও জ্বালানি খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বেসরকারি খাতকে উন্মুক্তকরণ এবং সর্বোপরি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকে কৃতিত্ব দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশা করা হচ্ছে ২০৩৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। সরকার ব্যাপকহারে টেকসই অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছে উল্লেখ করে তিনি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নদীর তলদেশে টানেল, মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ এবং গণপরিবহন ব্যবস্থার সম্প্রসারণের তথ্য তুলে ধরেন। সরকারপ্রধান বলেন, পদ্মা সেতু জাতীয় ও আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাবে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়াবে এবং ন্যূনতম ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এসব সাফল্যের ওপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ এখন ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ মধ্য-আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে চায়। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।

তিনি বলেন, এই রূপকল্প অর্জনের জন্য তার সরকার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫ প্রণয়ন করেছে। যেখানে বেসরকারি এবং বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের একটি কৌশলগত পথরেখা দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যদি প্রতি বছর গড়ে ৫ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে আশা করা হচ্ছে ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হতে সক্ষম হবে। রূপকল্প-২০৪১ অনুযায়ী তার সরকার এফডিআই-সহ বেসরকারি বিনিয়োগকে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুপাত ৩১ দশমিক চার-তিন শতাংশে উন্নীত করতে চাই। বাংলাদেশে এখন জ্বালানি, পানি, লজিস্টিকস এবং পরিবহন খাতে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবকাঠামো গড়ার সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে শুধু লজিস্টিকস খাতই ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি ২০৩০ সালের মধ্যে নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আর তখন যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং বর্তমান উচ্চ-প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যেতে পারবে বলেও আশা প্রকাশ করেন। একে অনেক উচ্চকাঙ্ক্ষা মনে হলেও সবসময় একটা ভালো লক্ষ্য থাকা উচিত বলেও এ প্রসঙ্গে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সাল লাগাদ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত ও ধনিক শ্রেণির সংখ্যা হবে তিন কোটি ৪০ লাখ। ২০৪০ সালের মধ্যে আনুমানিক মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে পাঁচ হাজার ৮৮০ মার্কিন ডলার। কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারের কেন্দ্রস্থল হতে পারে এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধ হিসেবে বাংলাদেশ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশে ব্যবসার অফুরন্ত সুযোগ বিদ্যমান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিশাল কর্মীবাহিনী থাকার এবং কৃষিখাতের বিভিন্ন সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে ৬৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ কর্মজীবী বয়স-বিভাগে অবস্থান করছে। সহজেই প্রশিক্ষিণযোগ্য একটি তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা বেসরকারি বিভিন্ন খাতের বিনিয়োগে অবদান রাখতে পারে। ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী প্রায় ১১ কোটি ৪০ লাখ নাগরিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে যেকোনো বিনিয়োগে মূল্যবান অবদান রাখতে প্রস্তুত বলেও তিনি জানান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজিটাল খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২২ সালে আইসিটি খাতে প্রায় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ২০২৫ সাল নাগাদ এই খাতে রফতানি আয় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার ফ্রিল্যান্সার রয়েছে যা বিশ্বব্যাপী অনলাইন শ্রমের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ৩৮টি হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করছে যেগুলোও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী ড.মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি, ভুটানের শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী কর্মা দরজি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপ-মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত জিয়াংচেন ঝাং, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র ও প্রদর্শিত হয়। সূত্র: বাসস।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।