বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের অবস্থা উদ্বেগজনক


Published: 2022-11-29 23:11:14 BdST, Updated: 2024-04-24 01:03:03 BdST


বিজনেস ওয়াচ রিপোর্ট : রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের অবস্থা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে সংসদীয় কমিটি। কমিটি জানিয়েছে, ব্যাংকের ঋণ গ্রাহকদের অনেককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকগুলোর ক্ষেত্রে ঋণের বিপরীতে জামানত নেই। ব্যাংকটির বড় খেলাপিদের থেকে বার্ষিক আদায়ের হার এক শতাংশেরও কম। জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সোনালী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ন্যাশনাল ফিন্যান্স লিমিটেড, প্রিমিয়াম লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স লিমিটেডের খেলাপি ঋণের আর্থিক অনিয়ম যাচাই-বাছাইয়ে ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়। ওয়াসিকা আয়শা খানকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন আহসান আদেলুর রহমান ও খাজিদাতুল আনোয়ার। কমিটি দীর্ঘ যাচাই-বাছাই করে সোমবার (২৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত মূল কমিটির বৈঠকে তার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাব কমিটির প্রধান ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, আমরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এটা নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করে সুপারিশ বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো হবে। এদিকে সাব কমিটি তার প্রতিবেদনে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ ও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ঋণ প্রদাণের ক্ষমতা সীমিতকরণসহ ১৪ দফা সুপারিশ করেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী সোনালী ব্যাংকের ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ৫ লাখ ৫০ হাজার খেলাপি ঋণ গ্রাহকের সংশ্লেষ অর্থের পরিমাণ ১৭ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। ডিসেম্বর ২০২১ এ খেলাপি ঋণ গ্রাহক কমে দাঁড়ায় তিন লাখ ৭৬ হাজার। কিন্তু খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয় ১৮ হাজার ৭৮৬ কোটি। এ বছর এপ্রিল পর্যন্ত খেলাপি ঋণ গ্রাহক কিছুটা বেড়ে হয় তিন লাখ ৯৭ হাজার। আর খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে হয় ১৮ হাজার ৭১২ কোটি। ২০২০ সালের (৬ দশমিক ২২ শতাংশ) তুলনায় ২০২১ সালে (৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ) খেলাপি ঋণ আদায় কিছুটা বেড়েছে। ডিসেম্বর ২০২০ সালে ১০ কোটি তদূর্ধ্ব ২৩৭ ঋণ খেলাপির সংশ্লেষ অর্থ ১১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। ডিসেম্বর ২০২১ খেলাপির সংখ্যা বেড়ে হয় ৩০৮। একইসঙ্গে খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়ে হয় ১৩ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। এপ্রিল ২০২২ এ খেলাপির সংখ্যা হয় ৩০৯ এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ হয় ১২ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মোট ঋণের বিপরীতে খেলাপি ১৬-১৭ শতাংশ। এসব খেলাপি ঋণের মধ্যে বছরে আদায়ের হার এক শতাংশেরও কম। যা মোটেও সন্তোষজনক নয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বড় ঋণের বিপরীতে রক্ষিত সহজামানতের পরিমাণ ঋণস্থিতির ৬০ শতাংশ, যা অপ্রতুল। ঋণ প্রদানে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে ঘাটতি ছিল।

এদিকে ছোট ঋণ খেলাপিদের ক্ষেত্রে জামানত ১৫০ শতাংশের মতো। এসব খেলাপি ঋণ আদায়ের হার ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। মোট ঋণ খেলাপির মধ্যে ১০ কোটির ওপরের সংখ্যা শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ (০.০৮%)। কিন্তু তাদের কাছে খেলাপি মোট খেলাপির ৬৭ শতাংশ। ব্যাংকটির ছোট খেলাপি ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা বড় খেলাপির তুলনায় বেশি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সাব কমিটির বলেছে, ব্যাংকটির অনেক ঋণ গ্রাহককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকগুলোর ক্ষেত্রে জামানত নেই। জামানত থাকলেও বিক্রির প্রক্রিয়া জটিল। জামানতের পরিমাণ ও আদায়ের হার আপাতদৃষ্টিতে ভালো দেখালেও ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) ১০ কোটি তদূর্ধ্ব ২৭ জন ঋণ খেলাপির এক হাজার ৪৪ কোটি ৪০ টাকার টাকার বিপরীতে এ বছর এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে কোনও আদায় নেই। এটিকে অত্যন্ত হতাশাজনক ও দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনার পরিচায়ক বলে উল্লেখ করা হয়। এপ্রিল ২২ পর্যন্ত ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ ঋণ খেলাপির বিপরীতে ১০ কোটি তদূর্ধ্ব ঋণ ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০২০ সালে এসআইবিলের মোট বিনিয়োগের (ঋণ) মধ্যে শ্রেণিকৃত (খেলাপি) ঋণ এক হাজার ৬২১ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। ১০ কোটি টাকার বেশি খেলাপিদের কাছে ব্যাংকের দায় এক হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। যা মোট খেলাপির ৭০ শতাংশ।

এ ব্যাংকের বেশিরভাগ ঋণের অনুকূলে জামানত নেই। পার্সোনাল গেরেন্টরের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হয়েছে। বড় ঋণ গ্রহীতাদের খেলাপি হওয়ার প্রবণতা বেশি। ন্যাশনাল ফাইন্যান্স মোট ঋণের (৬৪৩ কোটি) ১৯ শতাংশ শ্রেণিকৃত। শ্রেণিকৃত ঋণের ১০ জন গ্রাহকের কাছে। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের এপ্রিল ২২ ব্যাংকের ঋণ ও অগ্রীমের পরিমাণ এক হাজার ৩৮৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১২০ জন খেলাপি ঋণ গ্রহীতার বিপরীতে শ্রেণীকৃত ঋণ এক হাজার ৩৬৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। যা মোট ঋণের ৯৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে ১০ কোটি তদূর্ধ্ব খেলাপি ৪৬ জন এবং সংশ্লেষ অর্থের পরিমাণ এক হাজার ৫৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।