মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঋণ কেলেঙ্কারিতে দুদকের মুখোমুখি কৃষি ব্যাংকের জিএম খালেদুজ্জামান


Published: 2023-09-26 12:38:57 BdST, Updated: 2024-05-07 21:35:44 BdST


নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্নীতি ও ঋণ কেলেঙ্কারিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মুখোমুখি হয়েছেন কৃষি ব্যাংকের জিএম মো. খালেদুজ্জামান। এক সময়ে ব্যাংকের বিভাগীয় অফিসের জেনারেল ম্যানেজার দায়িত্ব পালন করে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। তার আওতাধীন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জসহ কৃষি ব্যাংকের শাখাগুলোতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন। মূলত সর্বশেষ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর শাখা থেকে মহেরা গ্রুপের নামধারী প্রতিষ্ঠানকে ধাপে ধাপে প্রায় তিন কোটি টাকার বিশেষ কৃষি ঋণ দিয়ে দুদকের মুখোমুখি। এছাড়া জিএম খালেদুজ্জামান সিন্ডিকেটের ১০০ কোটি টাকার বড় অংকের ঋণ দেওয়ার প্রচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ঢাকার উত্তরা ও মিরপুরসহ অবৈধ উপায়ে অর্জিত ৬/৭টি ফ্লাট-বাড়ি থাকার অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান শুরু করার পর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অনুসন্ধান কর্মকর্তা। অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক প্রবীর দাস খালেদুজ্জামকে জিজ্ঞাসাবাদ ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহ করেছেন।

এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) রেজাওয়ানুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। তাই আপনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেন। অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করে দুদকের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, কৃষি ব্যাংকের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ, সেসব বিষয় সংশ্লিষ্ট নথিপত্র যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কৃষি ব্যাংকের ঢাকা বিভাগের একজন জিএম মো. খালেদুজ্জামানের দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতায় কৃষি ব্যাংকের ঢাকা বিভাগ ডুবে যাচ্ছে। তিনি একজন আপাদমস্তক দুর্নীতিবাজ। ব্যাংকটির শাখাগুলোতে সিন্ডিকেট চক্র নিয়ন্ত্রণ করে কোটি কোটি টাকা সম্পদ গড়েছেন খালেদুজ্জামান।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ব্যবসায়ী তাহেরুল ইসলাম ও তার ভাই মোশারফ হোসেনের মালিকানাধীন মহেরা অয়েল মিল নামে নামধারী প্রতিষ্ঠানটি চিহ্নিত ঋণ খেলাপি। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে চিহ্নিত হয়েছে ঋণ খেলাপির বিষয়টি। ইতোমধ্যে ব্যাংকটি একই প্রতিষ্ঠানের অপর একটি প্রতিষ্ঠান মহেড়া পেপার মিলসকে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ দিয়ে বিপদে রয়েছে। ওই ঋণের বিপরীতে দেওয়া মর্টগেজ সম্পত্তির নথিপত্র অধিকাংশই জাল। অন্যের জমি নিজেদের দেখিয়ে ঋণ নিয়েছে। শুধু তাই নয় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে মহেড়া পেপার মিলসের নেওয়া ঋণের বিপরীতে মর্টগেজ হিসেবে দেওয়া কোর্ট বহুরিয়া মৌজার ৪৯ শতাংশ জমি দিয়ে কৃষি ব্যাংকের টাঙ্গাইল শাখা থেকে বড় অংকের ঋণ নেওয়া চেষ্টা করে। কৃষি ব্যাংকের হেড অফিসের হস্তক্ষেপ ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের তদন্ত রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ওই আটকানো গেলেও কৃষি ব্যাংক, ঢাকা অফিসের জিএম মো. খালেদুজ্জামানকে আটকানো যায়নি। তিনি তার নিজস্ব ক্ষমতা অপব্যবহার ও ঘুষের বিনিময়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে ব্যবসায়ী তাহেরুল ইসলাম ও তার ভাই মোশারফ হোসেনকে ৫০ লাখ টাকা করে ৫ কিস্তিতে জাল মর্টগেজের বিপরীতে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা কৃষি ঋণ দিয়েছে।

কৃষি ব্যাংকের একটি সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মহেরা গ্রুপের মালিক তাহেরুল ইসলাম ও মোশারফ হোসেনের মালিকানাধীন কাগুজে প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুরজাহান এগ্রো ফার্মের নামে ফর্মের নামে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৭ শতাংশ সুদে ৫০ লাখ টাকা করে কয়েক দফায় কোটি কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। গরু মোটা-তাজাকরণ ও দুগ্ধ উৎপাদন ব্যবসা খাতে ওই ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। মেসার্স নুরজাহান এগ্রো ফার্ম" নামক প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপারিশ করে শাখা ব্যবস্থাপককে চাপ দিয়ে ওই ঋণ মঞ্জুর করতে বাধ্য করেন জিএম খালেদুজ্জামান সিন্ডিকেট। বর্তমান কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে জিএম হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি ডিএমডি পদমর্যাদার গাড়িসহ অন্যান্য সুবিধা ব্যবহার করছেন বলেও জানা গেছে। এছাড়াও জিএম খালেদুজ্জামান সিন্ডিকেট আরও ১০০ কোটি টাকার বড় অংকের ঋণ দেওয়ার প্রচেষ্টায় রয়েছে।
সূত্র : ঢাকা পোস্ট

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।