বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শক্তিশালী ও আধুনিকায়ন হচ্ছে বিআইডব্লিউটিসির নৌবহর


Published: 2018-07-29 19:41:17 BdST, Updated: 2024-04-24 14:10:03 BdST

বিজনেস ওয়াচ প্রতিবেদক: ১ হাজার ৩১৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে বিআইডব্লিউটিসির নৌবহর শক্তিশালী ও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এজন্য আজ রোববার (২৯ জুলাই) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। প্রকল্পের আওতায় বিআইডব্লিউটিসির জন্য ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং ২টি নতুন স্লিপওয়ে নির্মাণ করা হবে।এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩১৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি ১ হাজার ২৫৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল ৬৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন  জুলাই, ২০১৮ হতে জুন, ২০২২ পর্যন্ত মেয়াদকালে ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের ২৭টি উপজেলা। ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের ২৭টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ সহজ, জনপ্রিয় হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ২৮নং অধ্যাদেশ বলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন এবং ৯টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১০টি প্রতিষ্ঠানের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি ও নৌযান একীভূত করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠালগ্নে বিআইডব্লিউটিসির মোট জলযানের সংখ্যা ছিল ৬০৮টি। এ সকলই ছিল উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। অধিকাংশ জলযান বয়সের ভারে ছিল ন্যূব্জ। ফলে ৬০৮টি জলযান বহরে থাকলেও বিআইডব্লিউটিসি সকল জলযান সার্ভিস পরিচালনায় নিয়োজিত করতে পারেনি। এ অবস্থায় বিআইডব্লিউটিসি জলযান বহরের উন্নয়নে পুরাতন জলযান পুনর্বাসন এবং নতুন জলযান সংগ্রহে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে। আশি ও নব্বই দশকে ডেনমার্ক, জার্মানী, বেলজিয়াম এবং পরবর্তী চীন সরকারের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজ  সংস্থার জলযান বহরে সংযুক্ত হলেও ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে বর্তমানে জলযানগুলো অত্যন্ত নাজুক ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই অনেক জলযান অর্থনৈতিক আয়ুস্কাল অতিক্রম করেছে। বর্তমানে এ সংস্থাটির ১২৮টি বাণিজ্যিক জলযান ও ৫৩টি সহায়ক জলযানসহ মোট ১৮১টি জলযানের মাধ্যমে ফেরি সার্ভিস, যাত্রীবাসী সার্ভিস, কার্গো সার্ভিস ও শীপরিপেয়ার সার্ভিস প্রদান করা হচ্ছে। তবে জলযানের সংখ্যা কম ও মানসম্মত আধুনিক না হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী যথাযথ নৌ-পরিবহন সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ প্রেক্ষিতে ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং ২টি নতুন স্লিপওয়ে নির্মাণের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়।

নপরিকল্পনা কমিশন সুত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ  প্রকল্পটির প্রথম পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত পিইসি সভায় “প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত জলযানসমূহের প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন এবং এ সংক্রান্ত সম্ভব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করে জলযান ক্রয় সম্পর্কিত প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করতে হবে” মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পিইসি সভার উক্ত সিদ্ধান্তের আলোকে ১ হাজার ৩৫১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জুলাই ২০১৭ হতে জুন ২০২১ পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পের ডিপিপি পুনর্গঠন করে প্রেরণ করা হলে প্রকল্প প্রস্তাবের ওপর গত ২৬/১০/২০১৭ তারিখে পুনরায় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান পুনর্গঠিত ডিপিপি অনুসারে প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ৩১৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা এবং মেয়াদ জুলাই,  ২০১৮ হতে জুন, ২০২২ পর্যন্ত।

এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ

          বিআইডব্লিউটিসির নৌবহর শক্তিশালীকরণ ও আধুনিকায়ন করা; মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরাতন জাহাজসমূহ প্রতিস্থাপন করা; অভ্যন্তরীণ উপকূলীয় নৌ-পথে নিরাপদ ও দক্ষ নৌ-পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; নৌ-পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা; নৌ-পথে ক্রুজ সার্ভিস চালু করা; সংস্থার জলযান বহরে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং পুনর্বাসন সুবিধাদির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; ভবিষ্যৎ ট্রাফিক ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা; এবং সংস্থার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা।

এ প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রমঃ  ফেইজ-১ (বাস্তবায়নকাল: জুলাই ২০১৮ হতে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত) : আধুনিক উপকূলীয় যাত্রীবাহী জাহাজ নির্মাণ-০৪টি; সী-ট্র্যাক নির্মাণ-০৮টি; ইমপ্রুভড কে-টাইপ ফেরি নির্মাণ-০৪টি; ইমপ্রুভড ইউটিলিটি ফেরি নির্মাণ-০৬টি; মর্ডাণ কেবিন ক্রুজার কাম ইন্সপেকশন বোট-০১টি; ফেরি পল্টুন-০৬টি; ঘাট পণ্টুন-০২টি; ফায়ার ফাইটং কাম-স্যালভেজ টাগ নির্মাণ-১টি; অয়েল ট্যাংকার (ডাবল হাল ও ডাবল বটম)-০১টি।

ফেইজ-২ (বাস্তবায়নকাল: জুলাই ২০১৯ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত) :প্যাসেঞ্জার ক্রজার নির্মাণ-০৩টি; আধুনিক অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী জাহাজ নির্মাণ-০৩টি; ফায়ার ফাইটিং কাম-স্যালভেজ টাগ নির্মাণ-০১টি; অয়েল ট্যাংকার (ডাবল হাল ও ডাবল বটম)-০১টি; ইমপ্রুভড কে-টাইপ ফেরি নির্মাণ-০২টি; স্লিপওয়ে ও উইঞ্চ এর জন্য মেশিনারিজ সংগ্রহ ও স্থাপন, টেস্টিং এবং কমিশনিং-প্যাকেজ; ওয়ার্কশপের জন্য মেশিনারিজ সংগ্রহ-প্যাকেজ; ক্রেন, সাব-স্টেশন, জেনারেটর ফর্ক লিফট সংগ্রহ ও স্থাপন-প্যাকেজ; স্লিপওয়ের জন্য পূর্ত কাজ (মাটি/কাদা অপসারণ, বালি ও মাটি ভরাট আরসিসি ওয়ার্ক, ব্রিক, ব্রিক সোলিং ইত্যাদি)-প্যাকেজ; পূর্ত কাজ (উইঞ্চ নির্মাণ পরিচালনা, অপারেশন রুম, হুইফ হাউজ, কন্ট্রোল রুম, টুলস রুম, অস্থায়ী অফিস ভবন নির্মাণ এবং এ্যাপ্রোচ রোড ও প্যাকিং ইয়ার্ড ইত্যাদি নির্মাণ)-প্যাকেজ; স্লিপওয়ে সংলগ্ন নদী তীরবর্তী এলাকার ভাঙন রোধ-প্যাকেজ; জেটি নির্মাণ (স্পীড ও আরসিসি এবাটমেন্টসহ)- প্যাকেজ; ডকইয়ার্ড সংলগ্ন নদীর তলদেশ হতে মাটি কাদা এবং বালি ড্রেজিং ও ম্যানুয়েল কাটিং এর মাধ্যমে অপসারণ-প্যাকেজ।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।