মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনকে অক্ষত রেখেই শুরু হচ্ছে মোংলা ইকোনমিক জোনের কাজ


Published: 2019-10-14 20:17:14 BdST, Updated: 2024-04-23 21:41:03 BdST

বিজনেস ওয়াচ প্রতিবেদক: সুন্দরবনকে অক্ষত রেখেই মোংলা ইকোনমিক জোনেরকাজ শুরু করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।  সোমবার ১৪ অক্টোবর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সিকদার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোন প্রাইভেট লিমিটেডের বিনিয়োগ উন্নয়ন শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সালমান এফ রহমান বলেন, আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের বিষয়ে খুবই সিরিয়াস। সুন্দরবনের ক্ষতি করে কিছু করা হবে না। আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন। তিনি বলেন, বিশ্বে ইকোনমিক জোনের অনেক মডেল রয়েছে। আমাদের এখানে করা হয়েছে কান্ট্রি স্পেসিফিক ইকোনমিক জোন। অভিনব আইডিয়া। চীনা ইকোনমিক জোন, জাপানিজ ইকোনমিক জোন, ভারতীয় ইকোনমিক জোন দেখে কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অনেকে বিনিয়োগ করতে আসছে। তিনি বলেন, প্রথমে যখন ১০০ ইকোনমিক জোনের কথা বলা হয়েছিল তখন অনেকে বিশ্বাস করতে চায়নি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ১০০ যথেষ্ট নয়। আরও জোনের প্রয়োজন পড়বে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কিন্তু বিসিক দিয়ে কাজটি শুরু করেছিলেন। সেইটারই একটি বৃহৎ ভার্সন অর্থনৈতিক জোন। এখানে একই সঙ্গে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান শৃঙ্খলাভাবে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারবে। সরকারের মধ্যম ও উন্নত রাষ্ট্রের লক্ষ্যমাত্রা এবং ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে এসব শিল্প জোন। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরা গ্যাস-বিদ্যুতের সকল-সুযোগ-সুবিধা এখানে পাবেন।

তিনি বলেন, এতদিন কী হতো? কোথাও রাস্তা নির্মাণ হলে তার পাশে গিয়ে আমরা জমি কিনতাম। এরপর ভরাট করে শিল্প স্থাপন করে গ্যাস বিদ্যুতের জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দিতাম। ইকোনমিক জোনগুলো সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে তখন ইকোনমিক জোন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। এখন তান বাস্তবতা চোখে পড়ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ১ কোটি কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে। বেজা মুহূর্তে অনেক কাজ করে দিচ্ছে। এটা এখন বাস্তবতা। তিনি বলেন, মোংলার ইকোনমিক জোনটি সুন্দরবনের কাছে। আমরা যেমন শিল্প চাই, তেমনি সুন্দরবন ও সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা করতে চাই। যারা এখানে বিনিয়োগ করতে চান তাদের অনুরোধ করব হলুদ কিংবা লাল ক্যাটাগরির কোনো শিল্প স্থাপনের প্রস্তাব না দিতে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, অন্যান্য দেশ অনেক আগে শুরু করেছে। আমরা বেসিক্যালি ২০১৫ সালে কাজ শুরু করেছি, লক্ষ্য ১০০ ইকোনমিক জোন। প্রথমে চট্টগ্রামের মিরসরাইতে ৫৫০ একর জমি দিয়ে যাত্রা শুরু করি। এখন সেখানে ৩০ হাজার একর জমি কনফার্ম হয়েছে। আনেক শিল্পও স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। মহেশখালীতে ২৫ হাজার একর জমি নিশ্চিত করা হয়েছে। বেজা ইতোমধ্যে ৬০ হাজার একর জমির ব্যাংক তৈরি করেছে। ১ লাখ একর জমি কনফার্ম করতে চাই। এই কাজ করতে গিয়ে প্রচুর অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। এখন শুধুই এগিয়ে চলার সময়। এক সময় এটাকে অনেকে বিশ্বাস করতে চায়নি। এখন এটা বাস্তবতা বলে মন্তব্য করেন বেজা চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, আমরা এতদিন ইকোনমিক জোন বলতে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার মধ্যে আটকে ছিলাম। ৩৯ বছরে মাত্র ৮টি ছোট ছোট ইপিজেড স্থাপন করেছি। যাতে মোট জমি রয়েছে মাত্র ২ হাজার ২৯৮ একর। এখন অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানিমুখী শিল্প এসব জোনে থাকবে। আমরা মিনিটের কম সময়ের মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স করে দিচ্ছি। অনেক কাজ এখন সহজ হয়ে গেছে।

বেজার নির্বাহী সদস্য মো. আইউব বলেন, ২০১০ সালে বেজা গঠিত হয়েছে। আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ১০০ ইকোনমিক জোন স্থাপনে কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানত খাস ও এক ফসলি জমিতে এসব জোন স্থাপন করার কঠোর নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে। পাওয়ার প্যাক দেশের প্রথম পিপিপির আওতায় স্থাপিত ইকোনমিক জোন। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ আধুনিক সকল সুবিধা বিদ্যমান। আমি বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ করব এখানে বিনিয়োগ করার জন্য।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাগেরহাট জেলায় মোংলা সমুদ্র বন্দরের কাছে ২০৫ একর জমিতে মোংলা ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সাথে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) সিকদার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোন প্রাইভেট লি. এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটির উন্নয়ন করেছে। দেশে পিপিপি’তে এটাই এ ধরনের প্রথম উদ্যোগ। ইতিমধ্যে সড়ক, সেতু, পানি সরবরাহ, বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র, প্রশাসনিক ভবন ইত্যাদি নির্মিত হয়েছে। ৪৪ শতাংশ প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আধুনিক সুবিধা সম্বলিত অগ্নিনির্বাপন কেন্দ্র ও বর্জ্য শোধনাগার, পার্শ্ববর্তী নদীতে ২টি জেটি, ট্যাঙ্ক টার্মিনাল, শিল্প স্থাপনের সব ধরনের ইউটিলিটি ও সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এখানে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হক সিকদার।

অনুষ্ঠানে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভূমি বরাদ্দ চুক্তি হয়, যার চারটিই শিকদার গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে রয়েছে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ইউনিলিভারের অন্যতম পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নাগা লিমিটেড।

অর্থনৈতিক অঞ্চলের সর্ব পশ্চিমে ১১ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে নাগা। এছাড়া শিকদার গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক পেট্রোলিয়ামকে আট একর, এনার্জিপ্যাককে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আট একর, শিকদার গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক স্টিলকে ২২ একর এবং মোটর সাইকেল সংযোজনের জন্য একটি কোম্পানিকে ১৪ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংক ও শিকদার ইনস্যুরেন্সকে শাখা খোলার জন্য ছোট আকারের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোনের সিইও সৈয়দ কামরুল হাসান মোহন, পরিচালক (স্ট্র্যাটেজি ডেভেলপমেন্ট) নাইমুজ্জামান মুক্তা।

 

 

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।