বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাজারে আসছে পলিথিনের বিকল্প পরিবেশবান্ধব ‘পাটের পলিথিন’ ব্যাগ


Published: 2017-03-12 02:33:26 BdST, Updated: 2024-04-24 09:25:10 BdST

বিওয়াচ ডেক্স: বাংলাদেশে পরিবেশদূষণের একটি বড় কারণ পলিথিন। এটি নিষিদ্ধ করে আইন হলেও রোধ করা যাচ্ছে না এর উৎপাদন ও ব্যবহার। ফলে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব ‘পাটের পলিথিন’ ব্যাগ তৈরি করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। আগামী জুন মাসে বাজারে আসছে এই ব্যাগ।

রাজধানীর খামারবাড়িতে চলমান পাটপণ্যের মেলায় এবং পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের কাছ থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।

রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে তিন দিনের বহুমুখী পাটপণ্যের মেলায় বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) স্টলে প্রদর্শিত হচ্ছে এ ‘পাট পলিমার’। দুই রঙের দৃষ্টিনন্দন পাটের পলিথিন ব্যাগগুলো চার কোণ আকৃতির। বাজারে প্রচলিত পলিথিন ব্যাগের মতোই হালকা ও পাতলা।

পাট পলিথিন দেখতে ওই স্টলে ভিড় পড়ছে দর্শনার্থীদের। অনেকে জানতে চান কীভাবে এ পলিথিন তৈরি হয়, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কি না। স্টলে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জবাব দেন দর্শনার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের।

স্টলের দায়িত্বে থাকা বিজেএমসির উপব্যবস্থাপক নৃপেন্দ্রনাথ হিরা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ড. মোবারক খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিএএফআরই) বিজ্ঞানীরা পাট পলিমার তৈরি করছেন। এটি পলিথিনের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন মোড়কজাতীয় পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হবে। আগামী জুন মাসে এটি বাজারে আসবে বলে আশা করছি।’

‘পাট পলিমার’- ছবি শেখ সাইফ
‘পাট পলিমার’- ছবি শেখ সাইফ

বিজেএমসির স্টলে পাট পলিমার ছুঁইয়ে দেখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাবিবা ও তাছলিমা। ঢাকাটাইমসকে তারা বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, পাট দিয়ে পলিথিন তৈরি করা যায় এখানে না এলে জানা হতো না। দুজনই চেয়েছিলেন পাট পলিথিন ব্যাগ কিনতে, কিন্তু সেগুলো শুধু প্রদর্শনীর জন্য রাখা জানতে পেরে হতাশ হন তারা।

ক্ষতিকর জেনেও কোনো বিকল্প না থাকায় পলিথিন ব্যাগে বহন করতে হয় কেনাকাটার পণ্য- এ কথা বলে হাবিবা বলেন, ‘আশা করি পাটের পলিমার ব্যাগ ক্ষতিকর পলিথিনের জায়গা দখল করবে। দামেও সাশ্রয়ী হবে।’ বর্তমানে প্রচলিত অপচনশীল পলিথিন ব্যাগ নালা-নর্দমায় আটকে থেকে এলাকার পরিবেশ নোংরা করে তোলে, সে কথাও জানান হাবিবা।

পরিবেশদূষণ রোধে সরকার পলিথিনের বিকল্প পাটের তৈরি পরিবেশবান্ধব  ‘পলিথিন’উৎপাদন করতে যাচ্ছে। পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, ‘আমরা পাট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে পলিথিন উৎপাদন শুরু করেছি। তিন মাসের মধ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে বড় পরিসরে কাজ শুরু হবে। আশা রাখি আগামী জুন মাসে ‘পাটের পলিথিন’ বাজারে পাওয়া যাবে। এ পলিথিন মাটিতে পচে যাবে।’

বাজারে প্রচলিত অপচনশীল পলিথিন মাটি কিংবা পানিতে শত শত বছর পড়ে থাকলেও ধ্বংস হয় না। এ সময়ে এটি থেকে ছড়ায় পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান।

সারা বিশ্ব এখন পলিথিনের বিকল্প খুঁজছে জানিয়ে মির্জা আজম বলেন, ‘আমরা এ বাজার ধরতে পারি। পাট পলিথিনের একমাত্র জোগানদাতা হবে বাংলাদেশ। আমাদের পরিকল্পনা আছে, সারা বিশ্বের পাটের পলিমার ব্যাগের বাজার দখল করার।’

একসময় সোনালি আঁশ নামে খ্যাত পাট ছিল বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের প্রধান উৎস। পাটের সুদিন ফিরিযে আনতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। ‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ/ পাটপণ্যের বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে গত সোমবার (৬ মার্চ)  ঘটা করে পালিত হয়েছে পাট দিবস। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে শুরু হয় তিন দিনের বহুমুখী পাটপণ্যের মেলা।

বাংলাদেশে পলিথিন

আশির দশক থেকে বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার শুরু। নব্বইয়ের দশকে ব্যাপক আকার ধারণ করে এর ব্যবহার। পলিথিনের অতি ব্যবহারের কারণে ১৯৯৮ সালের বন্যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে পলিথিন নিষিদ্ধের দাবি জোরালো হয়। পরে ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বাজারজাত ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়।

১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৬(ক) (সংশোধিত ২০০২) ধারার প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ঘোষিত সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের পলিথিন ব্যাগ অর্থাৎ পলিইথাইলিন, পলিপ্রপাইলিন বা এর কোনো যৌগ বা মিশ্রণের তৈরি কোনো ব্যাগ, ঠোঙা বা যেকোনো সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়, কোনো কিছু রাখার কাজে বা বহনের কাজে ব্যবহার করা যায় তার উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা ব্যবহার সমগ্র দেশে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। এই আইনের ১৫(১) এর ৪(ক) ধারা অনুযায়ী উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণের জন্য অপরাধীদের সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাসের কারাদণ্ডের বিধান আছে।

নিষেধাজ্ঞার পর বিভিন্ন সময় বাজারে অভিযান ও নজরদারির মাধ্যমে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বহুলাংশে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছিল। এ সময় বিকল্প হিসেবে কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগের প্রচলন হয় বেশ।

পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে ২০০৭ সাল থেকে পলিথিন নিয়ে নজরদারি শিথিল হয়ে পড়লে আবার ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে এর ব্যবহার। বর্তমানে বাজার সয়লাব পলিথিনে। একটা ডিম থেকে ১০ কেজি চাল- পলিথিন ব্যাগে ভরে দিচ্ছে বিক্রেতা। ব্যবহার শেষে এসব পলিথিন ফেলা হচ্ছে নালা-নর্দমা, এখানে-সেখানে। এতে   জলাবদ্ধতা, বন্যা, জনস্বাস্থ্য সমস্যার জন্য হুমিকর সৃষ্টি হচ্ছে।

বিভিন্ন সময় পলিথিনের ক্ষতিকর দিক নিয়ে মতামত দেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, পলিথিন থেকে সৃষ্ট এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ক্যান্সার ও ত্বকের বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগও ছড়াতে পারে। রঙিন পলিথিনে ব্যবহৃত ক্যাডমিয়াম শিশুদের হাড়ের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। পলিথিনের কাপে চা পান করলে আলসার ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে পলিথিনের প্রভাবে মাটির চারটি উপাদান সমভাবে সংবন্ধিত হতে পারে না। ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। এতে বৈচিত্র্য নষ্ট হয়।

মাটিতে চাপা পড়া পলিথিন কৃষিজমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এর কারণে মাটির অণুজীবগুলোর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে না। মাটির নিচে পানি চলাচলেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এর ফলে মাটির স্বাভাবিক কাজগুলো ব্যাহত হচ্ছে।

পলিথিন কী

বাজারে প্রচলিত পলিথিন আসলে পলিইথাইলিন। এটি এক ধরনের পলিমার, যা শক্ত, সাদা ও স্বচ্ছ বস্তু। বর্তমানে দুই ধরনের পলিথিন উৎপাদিত হয়- কম ঘনত্বের নরম পলিথিন এবং উচ্চ ঘনত্বের পলিথিন। পলিথিন তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় অপরিশোধিত খনিজ তেল।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।