শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নূরানী ডাইংয়ের প্রতারণা: ফৌজদারি মামলা করবে বিএসইসি


Published: 2022-09-29 23:57:34 BdST, Updated: 2024-04-20 01:10:42 BdST


নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিভিন্ন উপায়ে প্রতারণা করার তালিকাভুক্ত পোশাক খাতের কোম্পানি নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার লিমিটেডের উদ্যোক্তা ও পরিচালক, ইস্যু ব্যবস্থাপক এবং নিরীক্ষকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) তহবিল আত্মসাৎ ও আর্থিক প্রতিবেদন জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি জানান, নূরানী ডাইংয়ের আইপিও ফান্ড আত্মসাৎ এবং আর্থিক প্রতিবেদন জালিয়াতির ওপর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিচালিত তদন্ত প্রতিবেদন ও পরবর্তী সময়ে বিএসইসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের তদন্ত কমিটি ও ডিএসইর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নূরানী ডাইং কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালক, সংশ্লিষ্ট ইস্যু ম্যানেজার এবং অডিটরদের বিরুদ্ধে শেয়ার হোল্ডারদের বিভিন্নভাবে প্রতারিত করা ও প্রতারণা কার্যক্রমে সহযোগিতা করায় ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

যেসব অনিয়ম নূরানী ডাইংয়ের বিরুদ্ধে
>> নূরানী ডাইংয়ের ২০১৬ ও ২০১৭ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও প্রকাশিত প্রসপেক্টাস অনুযায়ী এবি ব্যাংকের কাছে কোম্পানিটির ব্যাংক দায় (দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ) যথাক্রমে ৫৭ কোটি ২০ লাখ এবং ৪২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা উল্লেখ ছিল। কিন্তু পরিদর্শক ও তদন্ত কমিটির সংগ্রহ করা ব্যাংক হিসাব বিবরণী অনুযায়ী প্রকৃত ব্যাংক দায়ের পরিমাণ ১৬৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা (২০১৮), ১৯২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা (২০১৯) এবং ২১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা (২০২০) বলে প্রমাণিত হয়। এতে কোম্পানিটির ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা গোপন করা হয়, যার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) চাঁদা অংশগ্রহণকারীরা বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে প্রতারিত হন।

>> কোম্পানিটি ২০১৭ সালে আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত ৪৩ কোটি টাকা বিভিন্ন কারসাজি স্কিম/ডিভাইসের মাধ্যমে যথা- ব্যাংক বিবরণী জালিয়াতি, এমটিডিআরের নগদায়ন এবং কোনো প্রকার কাজ/পরিষেবা ছাড়াই স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে অর্থ দিয়ে ৪১ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে, যার মাধ্যমে কমিশনের আইপিও অনুমোদনের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে।


>> কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনায় জড়িত তিনটি ইস্যু ম্যানেজার পাবলিক ইস্যু রুল ২০১৫ এর ৪(১)(ডি) ধারা অনুযায়ী ডিউ ডিলিজেন্স সার্টিফিকেট দিয়ে প্রসপেক্টাস ও এ সংক্রান্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চয়তা প্রদান করে এবং যা পরবর্তীকালে কোম্পানিটি প্রকৃত আর্থিক অবস্থা গোপন করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও আইপিও চাঁদা অংশগ্রহণকারীরা বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে প্রতারিত হন।

>> ২০১৭ সালে আইপিও ইস্যুকালীন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অডিট ফার্ম আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর এ সংক্রান্ত ক্লিন রিপোর্ট দেওয়ার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের আইপিও চাঁদা অংশগ্রহণকারীরা বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে প্রতারিত হন।

>> ২০২০ ও ২০১৯ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী ও প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নূরানী ডাইংয়ের প্রকাশিত হিসাব বিবরণীর রপ্তানি আয়, বিক্রি ও দেনাদারের স্বপক্ষে বিভিন্ন প্ৰমাণপত্ৰ যথা- পিআরসি, টিডিএস, সার্টিফিকেট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে ওই সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয় বলে প্রতীয়মান হয়। এসময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অডিটর এ সংক্রান্ত ক্লিন রিপোর্ট দিয়ে ওই আর্থিক প্রতিবেদনের নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়। এছাড়া ওই সময়ে কোম্পানিটির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে প্রতারিত হন।

>> উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবে ধারণ করা ৩০ দশমিক ৯৩ শতাংশ শেয়ার যমুনা ব্যাংক ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের কাছে জামানত হিসেবে জমা দিয়ে মার্জিন ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করে। পরবর্তী সময়ে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের জামানত রাখা ৩০ দশমিক ৯৩ শতাংশ শেয়ারের বিপরীতে প্রাপ্ত মার্জিন ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।