বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যেখানেই হাত দেওয়া হচ্ছে সেখানেই অনিয়ম: ডিজি ভোক্তা অধিদপ্তর


Published: 2022-05-20 04:47:40 BdST, Updated: 2024-04-25 20:56:43 BdST

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, সব জায়গায়ই অনিয়ম রয়েছে। যেখানেই হাত দেওয়া হচ্ছে সেখানেই অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে। তবে ভোক্তা অধিদপ্তরের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা হচ্ছে সঠিক তথ্যের অভাব। এই সংস্থার তথ্যের বৈধ উৎস নেই। ভোক্তা বা ব্যক্তিগত উৎস থেকে যে তথ্য পাওয়া যায়, সেগুলোর সঠিকতা যাচাই করারও সুযোগ নেই। এজন্য ভোক্তা অধিদপ্তর সকল গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন শৃংখলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের(ইআরএফ) যৌথভাবে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯’ বিষয়ক সেমিনারটি রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
মহাপরিচালক বলেন, ভোক্তারা প্রতারিত হতে হতে এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, এখন অধিকার খর্ব হচ্ছে সেটাই আর বুঝতে পারে না। এসময় তিনি ভোক্তার স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা দাড়িয়ে থাকছে। তা থেকে ধারণা করা যায় চিকিৎসকরা কোম্পানির সুপারিশে ওষুধ লিখছেন। আবার ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা রোগীর প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে নিচ্ছে। এতে রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুন্ন হচ্ছে। ইংরেজি মাধ্যম কোনো কোনো স্কুলে ভর্তির সময়ই কয়েক মাসের বেতন আগাম নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বই, খাতা, কলম, পোশাক স্কুল থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। কক্সবাজার পর্যটন কেন্দ্রে ছবি তোলা, বাইক চালানো, ঘোড়াসহ বিভিন্ন লোকেরা পর্যটকদের চারপাশে সারক্ষণ ঘুরঘুর করছে। পর্যটকরা নিজেদের মত সময় কাটাতে পারছেন না। আর কোনো সেবা নিলে উচ্চহারে মূল্য দিতে হচ্ছে। ওয়াসা, ডেসা, তিতাস থেকেও মানুষ যথাযথ সেবা পাচ্ছে না। পানির মান ভালো না। গ্যাসের চাপ কম থাকে। বিদ্যুতে লোডশেডিং হচ্ছে। বিমান সময়মত ছাড়ছে না। এক কথায় যেখানেই হাত দিচ্ছি, সেখানেই অনিয়ম পাচ্ছি। তিনি ওয়াসা, ডেসা, ডেসকো, তিতাসের সেবা বিষয়ে অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনার ইঙ্গিত দেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ইস্যু ভোজ্যতেলের সংকট নিয়ে কথা বলেন।


সফিকুজ্জামান বলেন, তথ্য অনুযায়ী তেলের সংকট হওয়ার কথা নয়, কিন্তু সংকট হয়েছে। কোম্পানিগুলো উৎপাদন কমিয়েছে। ব্যবসায়ীরা সরবরাহ আদেশ ধরে রাখছে। এক কথায় এই বাজারে এক ধরনের মনোপলি বা সিন্ডিকেট হয়ে গেছে। এসব জেনে বুঝেও কিছু করার থাকছে না। কারণ এক বা দুটি বড় কোম্পানি কোনো অজুহাতে উৎপাদন বন্ধ রাখলে যে সংকট হয়েছে তার চেয়ে বড় ধরনের সংকটের আশংকা রয়েছে। সরকার চায় পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে।
অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার বলেন, উন্নত দেশে উন্নয়ন সাবলীল করতে ভোক্তা অধিকার আইনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। অধিদপ্তরকে জনবলসহ অন্যান্য সহায়তা দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকেও শক্তিশালী করা দরকার। তিনি বলেন, প্রতিটি জায়গায় অনিয়ম রয়েছে। নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রচুর অনিয়ম রয়েছে। ভোক্তা অধিদপ্তর ঠিকমত কাজ করতে পারলে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে জরিমানা বা শাস্তি হবে না। তিনি ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের সহযোগিতা আশা করা করেন।
এএফপির ব্যুরো চীপ ও ইআরএফের সহ সভাপতি শফিকুল আলম বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ফলে ব্যবসার ধরণ পাল্টাচ্ছে। আবার ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতাও বেড়েছে। ফলে ভোক্তা অধিকার আইনটি সংশোধন করতে হবে। আইন ভঙ্গের শাস্তি আরও কঠোর করতে হবে। ভোক্তা অধিদপ্তরের গবেষণা ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি। আইএএফ সভাপতি শারমিন রিনভী ও আইন ভঙ্গকারিদের শাস্তি আরও কঠোর করার পরামর্শ দেন। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ক্যাবের উপদেষ্টা কাজী আব্দুল হান্নান। এতে ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রম ও আইন নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রজবী নাহার রজনী।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।