বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডলারের মূল্যের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়ার সুফল মিলছে না


Published: 2022-09-22 21:26:21 BdST, Updated: 2024-04-25 15:19:00 BdST


নিজস্ব প্রতিবেদক : ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিলেও বাজারে ডলারের তেজ কমেনি, বরং বেড়েছে। বুধবার এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করে প্রতি ডলার ১০৭ টাকার বেশি দামে। এছাড়া খোলাবাজারে ডলারের দাম এখন ১১৫ টাকায় উঠেছে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের ডলারের দামে এত পার্থক্য রেখে স্থিতিশীল করা যাবে না। প্রবাসী আয়ে দাম কমাতে হবে; রফতানিতে দাম বাড়াতে হবে। এভাবে সবক্ষেত্রে ডলারের দাম এক করে ফেলতে হবে। এর আগে ডলার-সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) শীর্ষস্থানীয় নেতারা ১১ সেপ্টেম্বর এক সভায় ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দেন। তাতে রফতানি আয়ের চেয়ে রেমিট্যান্স হয়ে আসা ডলারের দাম ৯ টাকা বেশি। ওই দিন বেঁধে দেওয়া হয়, রফতানি আয়ে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দাম ৯৯ টাকা, প্রবাসী আয়ে ১০৮ টাকা দাম বেঁধে দেওয়া হয়। আর ডলারের পাঁচ দিনের গড় খরচের চেয়ে এক টাকা বেশি দামে আমদানি দায় শোধ করতে বলা হয় ব্যাংকগুলোকে। ব্যাংকিং লেনদেনের পাশাপাশি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর ডলার কেনাবেচার দামও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঠিক করে দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর নগদ ডলার বিক্রির দরের চেয়ে সর্বোচ্চ দেড় টাকা মুনাফা করতে পারবে মানি চেঞ্জারগুলো।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে একই মুদ্রার মূল্য একেক জায়গায় একেক রকম। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এলে ডলারের দাম দেওয়া হচ্ছে ১০৮ টাকা। একই ডলার রফতানির মাধ্যমে এলে তার দাম দেওয়া হচ্ছে ৯৯ টাকা। যখন আমদানির জন্য দেওয়া হচ্ছে তখন মূল্য ধরা হচ্ছে ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা। আবার ফ্রিল্যান্সারসহ বিদেশ থেকে আসা অন্যান্য আয়ে সর্বোচ্চ ৯৯ টাকা দাম দিচ্ছে। যদিও ফ্রিল্যান্সার ও ডলার আয় করা অন্যান্য খাতের কর্মজীবীরা তাদের আয়ের জন্য আড়াই শতাংশ হারে সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছেন। এছাড়া যখন কেউ বিদেশে চিকিৎসার জন্য ডলার কিনতে যাচ্ছেন তার কাছ থেকে রাখা হচ্ছে (খোলা বাজারে) ১১৫ টাকা। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানিসহ বিভিন্ন আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। সেই তুলনায় বাড়েনি রফতানি ও প্রবাসী আয়। ফলে দেশে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। বেড়েছে ডলারের মূল্য, কমেছে টাকার মান। গত সাত মাসের কম সময়ে দেশের মুদ্রার দরপতন হয়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। এই যুদ্ধ শুরুর আগে দর ছিল ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা। গত মে মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। সেখান থেকে ধীরে ধীরে তা বাড়িয়ে ৯৬ টাকায় উন্নীত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ব্যাংকগুলোয় ডলার কেনাবেচা হচ্ছে আরও ১২ টাকা বেশি দামে। এদিকে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংকগুলোর দামকে স্বীকৃতি দেওয়া শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই দরকেই আন্তব্যাংক লেনদেন দর বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে। আগের দিনের লেনদেনের দরকে পরের দিন সকালে প্রকাশ করা হয়। এটাকেই বাজারভিত্তিক দর বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, টাকা ও ডলারের বিনিময়মূল্য ব্যাংকগুলো নির্ধারণ করেছে। জোগান ও চাহিদা এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) দামের ভিত্তিতে ডলারের এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে এখন এই দরে ডলার কেনাবেচা করছে। এটাকেই আন্তব্যাংক দাম বলা হচ্ছে। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে দামে ডলার কেনাবেচা করত, সেটি আন্তব্যাংক দর হিসেবে উল্লেখ করা হতো। সেই দামই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রায় দেড় মাস আন্তব্যাংকে ডলারের ক্রয়-বিক্রয়মূল্য ৯৫ টাকায় আটকে রেখেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারভিত্তিক করার আগের দিন অবশ্য ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরও কমিয়ে ৯৬ টাকা করা হয়। এদিকে বুধবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত সোমবার ডলারের পরিমাণ ছিল ৩৭ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার। আর চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেশগুলোর জুলাই-আগস্ট সময়ের জন্য ১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন পরিশোধ করায় রিজার্ভ ৩৭ দশমিক ১৩ বিলিয়নে নেমে আসে।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।