শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতি ডলারে ১০৮ টাকা চান রফতানিকারকরা


Published: 2022-09-28 21:30:48 BdST, Updated: 2024-04-20 11:20:26 BdST


নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রবাসী আয়ের মতো প্রতি ডলারের জন্য ১০৮ টাকা নির্ধারণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন দেশের রফতানিকারকরা। পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়ছে বিশ্বের সব অর্থনীতিতে। রফতানিকারকদের আশঙ্কা, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে অর্থনৈতিক মন্দা এবং স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলার শক্তিশালী হওয়ার ঘটনা গ্রাহকদের ক্রয় ক্ষমতা কমাচ্ছে। গত দুই মাসে পোশাক রফতানিকারকরা তাদের উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ কম অর্ডার পেয়েছেন। এদিকে সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন- বিটিএমএ’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি রফতানি আয় নগদায়নের ক্ষেত্রে ডলারের দর সংশোধন করে ১০৮ টাকা নির্ধারণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়, ‘আমদানি বিল পরিশোধ এবং রফতানি আয় নগদায়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্কিন ডলারের ভিন্ন দর নির্ধারণ করার ফলে আমাদের টিকে থাকাই কঠিন হবে।’

বর্তমানে রফতানি আয় নগদায়নের ক্ষেত্রে প্রতি ডলার ৯৯ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, রেমিট্যান্স আয়ের মতো এই ক্ষেত্রেও সমান দর সুবিধা পেলে, তারা বিভিন্ন প্রকার বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকটের মাঝে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবেন বলে আশা করছেন। অবশ্য সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দাম ঠিক করা হয়েছে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা। প্রবাসী আয়ে ডলারের নতুন এ দাম কার্যকর হবে ১ অক্টোবর থেকে। এর আগ পর্যন্ত (৩০ সেপ্টেম্বর) প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারের জন্য ১০৮ টাকা দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে লেখা চিঠিতে বিটিএমএ’র নেতাদের আশঙ্কা, ‘বৈষম্যপূর্ণ বিনিময় দর’ সমান্তরাল করা না হলে– তাতে করে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পোশাক রফতানিতে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প হিসেবে ২৯ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখা পুঁজিঘন টেক্সটাইল শিল্প অল্প সময়ের মধ্যেই রুগ্ন হয়ে পড়বে। এর প্রভাবে কর্মসংস্থান হারাবে লাখ লাখ কর্মী এবং এর অভিঘাত ছড়িয়ে পড়বে পোশাক রফতানির ওপরও। এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্পের নিট পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘রেমিট্যান্স ক্রয়ে প্রতি ডলারে ১০৮ টাকা দেওয়া সম্ভব হলে রফতানি আয়ে ৯৯ টাকা নির্ধারণ করা সঠিক হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি এতে দেশের ১৭ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই সিদ্ধান্তের কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডলার কেনা ও বেচার ক্ষেত্রে পার্থক্য কোনোভাবেই এক টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।’ এদিকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, টানা ১৩ মাস ধরে প্রবৃদ্ধির সুবাতাস উপভোগ করার পর তার উল্টোমুখী প্রবণতায় পড়েছে দেশের পোশাক রফতানি। চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৮ দিনে বছরওয়ারি হিসাবে ১২ শতাংশ ঋণাত্মক হয়েছে রফতানি প্রবৃদ্ধি। বিজিএমইএ’র তথ্যমতে, এই ১৮ দিনে পোশাক রফতানি হয়েছে ১৭২ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল ১৯৬ কোটি ডলার। বিটিএমএ’র সভাপতির পাঠানো চিঠিতে দেশের রফতানিকারকদের অর্জিত আয়ের ওপর ডলারের বিনিময় দর ৯৯ টাকা নির্ধারণের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোতে ডলারের দর অনেক বেশি। যেমন- পাকিস্তানের রফতানিকারকরা প্রতি এক ডলার রফতানি আয়ের বিপরীতে ২৬০ রুপি পাচ্ছেন।
এছাড়া বাংলাদেশের বেশিরভাগ প্রতিযোগী দেশের টেক্সটাইল মিল মালিকদের আরেকটি সুবিধা রয়েছে, তারা স্থানীয় উৎস থেকেও কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে রফতানিমুখী পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদেরকে উচ্চ মূল্যে কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়ার পরও ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসায় গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর প্রবাসী ও রফতানি আয়, আমদানি বিল নিষ্পত্তিসহ প্রতিটি লেনদেনে ডলারের ভিন্ন ভিন্ন দাম বেঁধে দেওয়া হয়। এবিবি ও বাফেদা বসে ডলারের দাম নির্ধারণ করে, যা ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।