শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে বাড়ছে আরও ৩৬২ কোটি


Published: 2022-11-22 22:23:31 BdST, Updated: 2024-04-20 04:49:01 BdST


নিজস্ব প্রতিবেদক : ৩৬২ কোটি টাকাসহ এক বছর মেয়াদ বাড়ছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন প্রকল্প। প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। মূল প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৬৯৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এখন প্রকল্পের ব্যয় প্রস্তাব করা হবে এক হাজার ৫৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে ৩৬২ কোটি টাকা। জানুয়ারি ২০২১ থেকে জুন ২০২৪ মেয়াদে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে জুন ২০২৫ মেয়াদ পর্যন্ত বাড়ানো হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য: বাংলাদেশের জন্য নির্ভরযোগ্য ও কার্যকরী আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো হিসেবে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সিস্টেম স্থাপন করা।

বিএসসিসিএল জানায়, নানা কারণে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সাবমেরিন ক্যাবল নেটওয়ার্ক দেশের অন্যতম প্রধান অবকাঠামো হিসেবে বিবেচিত হয়। ইন্টারন্যাশনাল লংডিস্টেন্স টেলিকমিউনিকেশন্স সার্ভিস (আইএলডিটিএস) পলিসি ও আইসিটি নীতিমালার আলোকে দেশের উচ্চ গতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) সার্ভিসেস অপারেটররা একই কার্যক্রম পরিচালনা করলেও দেশের ইন্টারনেট চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ বিএসসিসিএল এককভাবে সরবরাহ করছে। দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় কোম্পানি হিসেবে বিএসসিসিএল সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ সেবা দিয়ে আসছে। কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপন করে সাবমেরিন ক্যাবল দুটির মাধ্যমে বর্তমানে বিএসসিসিএল বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের সংযোগের জন্য ব্যান্ডউইথ সেবা দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশের বিএসসিসিএল ও আইটিসি ব্যান্ডউইথ ব্যবহার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়- বার্ষিক ব্যান্ডউইথ ব্যবহার বৃদ্ধির হার প্রায় ৭০ শতাংশ।

২০১৬ সালের শুরু থেকে বিএসসিসিএলের ব্যান্ডউইথ বিক্রয়ের মার্কেট শেয়ার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করে এবং বর্তমানে বিএসসিসিএলের মার্কেট শেয়ার প্রায় ৬০ শতাংশ। বিশ্লেষণে আরও দেখা যায় যে, ব্যান্ডউইথের এই ঊর্ধ্বমুখী ব্যবহারের প্রবণতা পরবর্তীসময়ে কয়েক বছরের জন্য অব্যাহত থাকবে। ফাইভ-জি সেবা বৃহৎ পরিসরে চালু হলে দেশে ব্যান্ডউইথের চাহিদা আরও বাড়বে। দেশের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল ২০০৫ সালে এবং দ্বিতীয় সাবমেরিন ২০১৭ সালে চালু হয়। প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের আয়ুষ্কাল আনুমানিক ২০ বছর বিবেচনায় আগামী ২০২৫ সালে এই ক্যাবলের কার্যক্ষমতা শেষ হয়ে যাবে। এছাড়া সাবমেরিন ক্যাবলটি প্রায় ১৫ বছরের পুরোনো হওয়ায় এর রক্ষণাবেক্ষণের কারণে সেবা বিঘ্নিত হওয়ার হার বেশি এবং তুলনামূলক পুরোনো প্রযুক্তির কারণে এই ক্যাবলের সংযোগ গ্রহণে ব্যবহারকারীরা কম আগ্রহী। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমসমূহ: বৈদ্যুতিক ও অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ, কার্যক্রম সাবমেরিন ক্যাবল ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম সংগ্রহ, অনাবাসিক ভবন (ফাংশনাল বিল্ডিং) ও অন্যান্য ভবন নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্প এলাকা: সিঙ্গাপুর হতে ফ্রান্স পর্যন্ত সংযুক্ত। সাবমেরিন ক্যাবলটি ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর হয়ে ভূ-মধ্য সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। ক্যাবলটির কোর ল্যান্ডিং স্টেশন হবে সিঙ্গাপুর, ভারত, জিবুতি, মিশর ও ফ্রান্সে। বাংলাদেশের ব্রাঞ্চটি বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। কেবল রুটটি একদিকে সিঙ্গাপুর ও অন্যদিকে ফ্রান্স পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। কক্সবাজার ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হবে। প্রকল্প সংশোধনের কারণসমূহ: প্রকল্পের আওতায় ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কোনো অংশে আট জোড়া ফাইবার ক্যাবল স্থাপনের পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তীসময়ে খরচের সুবিধা বিবেচনায় মোট দশ জোড়া ফাইবার স্থাপনের বিষয়ে কনসোর্টিয়ামে সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমানে ডলারের মূলবৃদ্ধি হয়েছে, ফলে বাড়ছে প্রকল্পের ব্যয়। প্রকল্প গ্রহণের সময় এক মার্কিন ডলার সমান ৮৪ টাকা ছিল এখন বেড়ে হয়েছে ১০৬ টাকা ৭৫ পয়সা। মূল প্রকল্পে বৈদেশিক খাতে ব্যয় বাড়ছে। প্রকল্পের মতামত দিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, সাবমেরিন ক্যাবলের পর দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ প্রয়োজনীয়তার প্রক্ষেপণ বিবেচনায় নিয়ে ক্রমবর্ধমান ব্যান্ডউইথ চাহিদা পূরণ করা হবে। এই লক্ষ্যে প্রস্তাবিত তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল প্রকল্পে ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি উন্নীত করা হবে। তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন প্রকল্পটির ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হবে।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।