রমজানে পণ্যের দাম নিয়ে শঙ্কা, নজরদারিতে রাখা হবে বাজার কমিটিকে
Published: 2023-03-18 12:27:41 BdST, Updated: 2023-04-02 05:49:22 BdST
নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে কেউ যাতে বাজার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে না পারে, সেজন্য সরকারের ১০টি সংস্থা বাজার তদারকি করবে। রমজানে ব্যবহৃত ১৫টি পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ারও চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। এছাড়া অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি হলে সংশ্লিষ্ট বাজার কমিটিকে নজরদারিতে রাখবে সরকার। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। তবুও জনমনে পণ্যের দাম নিয়ে শঙ্কা আছে। রাজধানীর নাখালপাড়ার বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন রমজানে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। রোজার সময় তেল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকায় প্রতি বারই অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যায় এসব পণ্যের দাম। নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও অনেকটা নাগালের বাইরে থেকে যায় নিত্যপণ্যের দাম। তিনি বলেন, ‘রোজা তো রাখতেই হবে, ইফতার সেহরিতে প্রয়োজনীয় খাবারের চাপ তো থাকেই। আর বাজারে গেলে দাম জিজ্ঞেস করলেই মনে হয়— কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। মাছ, মাংস, সবজি থেকে শুরু করে সব জিনিসের দাম অনেক বেশি। মধ্যপ্রাচ্যের মতো দেশে রোজায় পণ্যের দাম কমায়, আর আমাদের দেশে প্রতিযোগিতা চলে লাভ করার।’
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, রোজায় চাহিদার কথা চিন্তা করে প্রয়োজনীয় পণ্য ইতোমধ্যে মজুত করা হয়েছে। এবার পণ্যের ঘাটতি দেখা দেবে না। সরকার এলসি খোলা নিয়ে জটিলতা সহজ করেছে। রমজানে চাহিদা বাড়ে— এমন পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাজার পর্যবেক্ষণ বা মনিটরিংয়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকারের ১০টি সংস্থা মাঠে থাকবে এবং ১৫টি পণ্যের দাম বেঁধে দিতে কমিটি করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভর্তুকি মূল্যে পণ্য সরবরাহে মাঠে থাকবে টিসিবি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অবৈধভাবে যাতে পণ্যের মজুত না করা হয়, সেদিকে বিশেষ মনিটরিং থাকবে। এখানে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করবে। আর দাম নিয়ন্ত্রণে এবারই প্রথম নজরদারিতে থাকছে বাজার কমিটি। যে বাজারে পণ্যের দাম লাগাম ছাড়া থাকবে, ওই বাজার কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে মনিটরিং টিম। কয়েকদিন আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে এ তথ্য জানিয়ে দিয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে পণ্য আমদানিতে এলসি জটিলতায় পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখানেও প্রভাব পড়ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার রেটের কারণে পণ্যের দাম এমনিতেই বেশি হবে। এছাড়া অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে এলসি খুলতে না পারায় আমদানি কমে গেছে। ফলে কিছু পণ্যের সংকট থাকতে পারে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, কোনও পণ্যের সংকট এই মুহূর্তে নেই। রমজানের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য মজুত আছে। তারপরও কিছু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার লোভে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করে। আবার আমদানি জটিলতার অজুহাতে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে। এই মুহূর্তে বাজারে পণ্যের কোনও ঘাটতি নেই। তারা আরও জানান, সরকার এ বছর কয়েকটি পণ্যের দাম বেঁধে দিতে যাচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে— ভোজ্যতেল, চিনি, লবণ, পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনো মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, জিরা, আদা ও তেজপাতা। ইতোমধ্যে সয়াবিন তেল, চিনির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও খোলা বাজারে তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৯ মার্চ পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘মুরগির খুচরা বাজারে অনিয়ম রয়েছে। ক্রয়-বিক্রয়ে রশিদ নেই। তারা কোনও সরকারি নির্দেশনা মানতে চায় না। বাজার কমিটির কথা না মানলে, এমন কমিটি থাকার দরকার নেই।’ এভাবে চলতে থাকলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার কমিটি বিলুপ্ত করার সুপারিশ করা হবে বলেও জানান ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক।
ওই সভায় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থিতিশীল না করার অনুরোধ জানান। তাছাড়া সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করে ভোক্তাদের সঠিক দামে সঠিক পণ্য পাওয়ার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানান। রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে করণীয় সম্পর্কে গত রবিবার (১২ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘বিগত বছরের তুলনায় অনেকগুণ বেশি খাদ্য মজুত রয়েছে। দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এবার দুই ধাপে ১০ কোটি মানুষের কাছে ওএমএস ও টিসিবির পণ্য পৌঁছে দেওয়া হবে। তাই রমজানের আগে দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে মর্মে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) জনসাধারণকে আতঙ্কিত হয়ে কেনাকাটা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘রমজানে পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদা বেড়ে গেলে সরবরাহ আর চাহিদার মধ্যে ভারসম্য নষ্ট হয়। রমাজনে আমদানি-নির্ভর পণ্যের মজুত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি এবং পর্যাপ্ত মজুত আছে। কেউ যাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে কিংবা মজুত করে বাজার অস্থিতিশীল না করতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাজার মনিটরিংয়ে আমাদের সাধারণত ৪০টি টিম সারাদেশে কাজ করে। রমজানে ৫০টি টিম কাজ করবে। আমরা মনিটরিং জোরদার করছি, তদারকি করছি। কেউ যদি দাম বাড়ায় কিংবা পণ্য মজুত করে বাজার অস্থিতিশীল করে, আমরা কঠোর অবস্থানে যাবো। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বৈঠকেও আমাদের এই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।