শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে সংসদে নতুন বাজেট


Published: 2023-06-02 04:39:08 BdST, Updated: 2024-04-20 13:25:00 BdST


নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ এই শিরোনামে আসন্ন অর্থবছরের জন্য বাজেট উপস্থাপন শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেক ধাপ ওপরে হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ। বর্তমানে নানা রকম সংকটের মধ্যেও স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১-এর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে বাজেটের ডিজিটাল উপস্থাপনা প্রদর্শিত হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশের প্রথম ধাপ হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী। এটি জিডিপির ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। উচ্চপ্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা নিয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রাক্কলন করা হয়েছে এবারের বাজেটে। আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৬ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার কিছু সময় পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। এরপর অর্থমন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন। একটি প্রামাণ্য চিত্র আকারে উপস্থাপন শুরু করা হয় বাজেট। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয় এতে। এরপর মূল বাজেট উপস্থাপন শুরু হয়।

বাজেট অধিবেশনে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, চিফ হুইপসহ বিরোধী দলের সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। এর আগে বেলা ১২টায় অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নতুন বাজেট অনুমোদন করা হয়। সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত বিশেষ এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদ সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে বাজেট অনুমোদনের পরে সংসদ ভবনের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে অপেক্ষমাণ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নতুন বাজেট সংসদে উপস্থাপনের জন্য সম্মতিসূচক সাক্ষর করেন। সময় বাঁচাতেই এই দিন রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনের পরিবর্তে সংসদ ভবনের কার্যালয়ে অফিস করেন। নতুন বাজেটে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে সঙ্গে নিয়ে সংসদ অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তাদের স্বাগত জানান। অর্থমন্ত্রী সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি এবং কালো মুজিব কোট পরে সংসদে আসেন। হাতে ছিল লাল ব্রিফকেস। এই ব্রিফকেসে করেই বাজেট বই বহন করেন তিনি। নতুন এই বাজেট বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ৭৮৬ কোটি টাকার প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি পঞ্চম বাজেট এবং আওয়ামী লীগ সরকারের এটি ২৪তম বাজেট।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। বাজেটের এই ব্যয় মেটাতে মোট আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রা ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ৬৭ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা বেশি। নতুন বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। করমুক্ত আয়ের সীমা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন অর্থবছরের বাজেটে সরকারের মোট ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়াও সরকারের আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রণীত নতুন বাজেটে সরকারের পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। ঋণ ও অগ্রিম পরিশোধ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বিশেষ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি বাস্তবায়নে নতুন বছরের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। খাদ্য আমদানি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫০২ কোটি টাকা। এডিপির বাইরে বিভিন্ন স্কিম বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। সরকারের মুলধনী ব্যায় বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৯ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এছাড়া সরকারের অন্যান্য ব্যয় নির্বাহে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৫ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশের ঘরে রাখা হয়েছে। টাকার অঙ্কে ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ (অনুদানসহ) ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে বিদেশি ঋণ বাবদ পাওয়া যাবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। সরকার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন খাত থেকে ঋণ নেবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে নেবে ১ লাখ ২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে নেবে ৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা বেশি বৈদেশিক ঋণ আগামী অর্থবছরে নেওয়া হবে। আর ঋণগ্রস্ত বেশি হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য বেশি টাকা গুনতে হবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। এছাড়া বাড়ছে সরকারের মূলধনি ব্যয়ও। আগামী অর্থবছরে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ আয়ের প্রধান উৎস জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। এছাড়া কর ব্যতীত প্রাপ্তি (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্য হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি বৈদেশিক অনুদান থেকে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বৈদেশিক অনুদান সরকারকে পরিশোধ করতে হয় না। ফলে এ খাত থেকে আয়কে রাজস্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৮৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। এছাড়া অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেওয়া হচ্ছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পেশ করা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এই বাজেট পাস হবে আগামী ২৬ জুন। কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।