শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাকের দাম নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য করছে বিদেশী ক্রেতারা


Published: 2017-04-24 06:10:51 BdST, Updated: 2024-04-19 23:30:19 BdST

বিওয়াচ প্রতিবেদক: বিদেশী ক্রেতারা পোশাকের দাম নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য করছেবিদেশী ক্রেতারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য করছে। রানা প্লাজার মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরও শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ তারা নেয়নি। এমনকি তৈরি পোশাকের দামও বাড়ায়নি।  রানা প্লাজা দুর্ঘটনার চার বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ রোববার রাজধানীর গুলশানের গার্ডেনিয়া গ্রান্ড হলে আয়োজিত সামাজিক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। 

সভায় রেহমান সোবহান বলেন,বাংলাদেশ থেকে পাঁচ মার্কিন ডলারে পণ্য কিনে তা ২৫ ডলারে বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা ৫ ডলার নিয়ে আলোচনা করছি,কিন্তু বাকি ২০ ডলার কোথায় যায়-তা নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। বিশ্ব পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় এক ধরনের অন্যায্যতা আছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।  তিনি বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সুসমন্বয় থাকলে রানা প্লাজার মতো এমন বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না। শ্রমিক-মালিকের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেন।  তৈরি পোশাকে শিল্প চলমান সংস্কার কার্যক্রম আরো গতিশীল পরামর্শ দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন,গত ৪ বছরে সংস্কার কার্যক্রমে ঘাটতি ছিল। ক্রেতা,উদ্যোক্তা ও সরকার সবাই মিলে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।   সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্ষ বলেন,রানা প্লাজা ধসের পরে বেশ কিছু উদ্যোক্তা ব্যবসা ছেড়েছেন। এই ঘটনার পর ট্রেড ইউনিয়ন,শিক্ষা,প্রশিক্ষণ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিয়ে যে পরিমাণ অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল-তা হয়নি। দেশে ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা বেড়েছে,কিন্তু কার্যকারিতা কম। ক্ষতিগ্রস্তদের সবাইকে এখনও পুনর্বাসন করা যায়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।  অনুষ্ঠানে শ্রম সচিব সচিব মিকাইল সিপার বলেন, রানা প্লাজা ঘটনার পর সরকার পোশাক খাতের কর্ম পরিবেশের উন্নয়নে অনেক সংস্কার কাজ করেছে।   ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনেও যথেষ্ট সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।   কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের পরিচালক শামসুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন,রানা প্লাজা দূর্ঘটনার পর আমরা পরিদর্শন কার্যক্রম কয়েকগুন বাড়িয়েছি। শ্রমিকদের ডাটাবেজ তৈরির কাজও অনেক দূর এগিয়ে গেছে।  অনুষ্ঠানে শ্রমিক ইউনিয়ন থাকবে কি না, এটি এখনো আইনগত বিষয় জানিয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, বিজিএমইএ শ্রমিক ইউনিয়ন চায় না এটা বলা হচ্ছে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। ৫৯১টি কারখানায় শ্রমিক ইউনিয়ন আছে। তিনি আরো বলেন,পোশাক কিনতে ক্রেতারা বেশি পয়সা দেবেন না। বেশি পয়সার জন্য চাপ দিলে ক্রেতারা ইথিওপিয়া যাওয়ার কথা বলবেন। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভারত ধীরে ধীরে বাংলাদেশের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যাচ্ছে।  অনুষ্ঠানে শ্রমিক নেতা তৌহিদুর রহমান বলেন,রানা প্লাজা ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেক শ্রমিক এখনও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে সাড়ে ১৪ শতাংশ শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন। আর ৪২ শতাংশ শ্রমিক এখনও বেকার রয়েছেন। তাদের ফেরানোর বিষয়ে জোরালো উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।  বাংলাদেশি পোশাকের ন্যায্যমূল্য দাবি করে শ্রমিক নেতা তোফাজ্জল হোসেন বলেন,জিএসপি চলে গেলে বাংলাদেশের পোশাকের কী অবস্থা হবে--সেটা ভাবা দরকার।  অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।