শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গণমাধ্যম, রিপোর্টার ও বর্তমান প্রেক্ষিত


Published: 2022-05-23 05:09:47 BdST, Updated: 2024-04-20 17:36:44 BdST


কুদরত-ই-খোদা:সাংবাদিকতা পেশা অন্য দু-চারটা পেশার মতো নয়। উন্নত বিশ্বে সাংবাদিকতা কৃতিমান পেশা । যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপে সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতা একটি উচ্চমানের ব্রত। এ পেশায় যত বেশি ঝুঁকি তত বেশি গ্ল্যামার। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকতা এবং সংবাদপ্ত্র একটি গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে। অপ্রয়োজনীয় আইনকানুনে সাংবাদিকদের মত প্রকাশের পৃথিবীটা ছোট হয়ে আসছে। সংবাদপত্র তথা সংবাদ শিল্প চলে যাচ্ছে বেনিয়াদের হাতে। এখন অনেক গণমাধ্যমেই কর্পোরেট সাংবাদিকতা শুরু হয়েছে, যা সৃষ্টি ও সৃজনশীলতার বিপরীতে অবস্থান করে। তবে এটা যত্য যে আমাদের দেশে কয়েকটি সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম পেশাদারিত্ব টিকিয়ে রেখে সংবাদশিল্পকে পূর্ণ মর্যদায় ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। আবার পাশাপাশি শত শত অনলাইন পোর্টালসহ, বিজ্ঞাপন ধান্দায় গজিয়ে ওঠা দৈনিক সাপ্তাহিক সংবাদপত্র মৌলিক চরিত্র হারিয়ে ফেলছে। তবে এটা সত্য যে, শিক্ষিৎ তরুণদের মাঝে এই পেশার প্রতি প্রচন্ড রকম আগ্রহ বাড়ছে। তার কারণ হলো, সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণে একটি সরাসরি ভূমিকা এই মাধ্যমের রয়েছে। এক অর্থে এটাকে ক্ষমতাও বলা চলে। রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে সাংবাদিকদের সংগঠনসহ সংবাদপত্রের বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কারণ হলো, ঐক্য না থাকলে কোনো পেশারই সমৃদ্ধির আকাশ উন্মুক্ত হয় না। এই বিষয়টি যত দ্রুত গণমাধ্যম নীতিনির্ধারকদের বোধের মধ্যে আসবে, ততই পেশার গুরুত্ব বাড়বে।
জনপ্রিয় বা সেলিব্রেটি রিপোর্টার কিংবা সাংবাদিক বলে কিছুই নাই। কারণ রিপোর্টারদের বহুমাত্রিক বন্ধু থাকার কারণ নেই । সাম্প্রতিককালে ঢাকার গণমাধ্যমগুলো জনপ্রিয় কিংবা সেলিব্রেটি রিপোর্টার হিসেবে অনেককে পরিচয় করিয়ে দেন । এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা । জন সমর্থন ও জনপ্রিয়তা একই বিষয় নয় । কিন্তু মর্যাদা ও প্রোটোকলের প্রশ্নে একজন পেশাদার রিপোর্টার এবং পেশাদার সম্পাদক অবশ্যই গর্ব করে বলতে পারেন, মর্যাদার প্রশ্নে আমি এই অবস্থানে আছি । উল্লেখ্য যে, ভারতের ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র প্রাক্তন সম্পাদক প্রয়াত গিরিলাল জৈন একবার লিখেছিলেন, তিনি নিজেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও মর্যাদা সম্পন্ন মনে করেন। রিপোর্টারদের ক্ষেত্রেও একটি মর্যাদা সম্পন্ন কথা আমি বলতে চাই, ‘অ সরহরংঃবৎ ড়হপব সরহরংঃবৎ, ধ ৎবঢ়ড়ৎঃবৎ ধষধিুং সরহরংঃবৎ’. সাংবাদিকতার ক্ষেত্র আজ বহু প্রসারিত । দেশে আজ অনেকগুলো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে । যেমনঃ বর্তমান পৃথিবীতে খুব দ্রুতই পরিবেশ বিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠছে । এই বিষয়টির উপরে গুরুত্ব দিয়ে গবেষণাধর্মী রিপোর্ট, অনুষন্ধানী রিপোর্ট করার উপর গণমাধ্যমের আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে । চলমান পরিস্থিতির অত্যন্ত নিয়ামক শক্তি হলো পরিবেশ বিজ্ঞান । প্রশিক্ষণরত সাংবাদিক কিংবা রিপোর্টারদের আরেকটা বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। তা হলো ভাষার গতিশীলতার উপর । বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্ট কখনোই কবিতা হয়ে উঠবে না । পঠনযোগ্য হবে ।
বহুমাত্রিক সাংবাদিকতার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুই দিকই রয়েছে । তবে দুঃখ ও দূর্ভাগ্যজনক যে, যেই হারে মন্ত্রণালয় ও সংস্থাভিত্তিক রিপোর্টারদের অসংখ্য ভুইফোড় সংগঠন তৈরি হচ্ছে, তা মূল সাংবাদিকতাকে সংকুচিত করছে । হাত খুলে লেখা যাচ্ছে না । মত প্রকাশ করা যাচ্ছে না । এতে করে রিপোর্টাররা নিজেরাই নিজেদেরকে শৃংখলে আবদ্ধ করেছেন । ৮০ আর ৯০ দশকে অনুষন্ধানী সাংবাদিকতার যেই পরিপ্রেক্ষিত রচিত হয়েছিল, তা এখন মৃত প্রায় । যাদের দূর্নীতি অপকর্ম নিয়ে অনুষন্ধানী সাংবাদিকতা করার কথা, তারাই এখন বৃহৎ গণমাধ্যমের মালিক । পুজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার এটা একটা চুড়ান্ত রূপ । তবে এ থেকে উত্তোরণের উপায় কি? এটা নিয়ে ভাববার সময় এসেছে । অন্য জীবিকার চেয়ে সংবাদজীবি জীবিকার সাতন্ত্র এই যে, সমাজ তাকে এমন ক্ষমতা হাতে তুলে দিয়েছে, যার দ্বারা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে রাষ্ট্রশক্তি মোকাবেলা করতে পারবে । কিন্তু গণমাধ্যমের এই চলমান সংকোটকালে, বিভাজিত সাংবাদিকরা কি রাষ্ট্র শক্তির সাথে মোকাবেলা করতে পারবে ?

 

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।