শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি, জাতীয় সংকট এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত


Published: 2022-08-07 00:46:07 BdST, Updated: 2024-04-19 03:27:41 BdST

কুদরাত-ই-খোদা : পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই, হঠাৎ করে গভীর রাতে জ্বালানী তেলের দাম বাড়ানো কতোটা যৌক্তিক হয়েছে, এই প্রশ্ন সবার মুখে মুখে । নিয়মটা হলো ইনার্জি রেগুলেটারি কমিশন (বি,আর,সি) গণ শুনানি করে, জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দেবে । তারপর সরকার মূল্য বৃদ্ধি করবে । কিন্তু তা হলো না । এমন কি অংশীজন, পরিবহন মালিক – শ্রমিকদের সাথে আলোচনা না করেই, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে আজ শনিবার সারা দেশেই সংকট এবং নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে । এটাকি এড়ানো যেতো না? জন সম্পৃক্ত সিদ্ধান্ত গুলো, জনগণকে অবহিত করে নিলে, সরকারের মধ্যে ন্যূনতম স্বস্তির বাতাস বইতো । সরকারের হয়তো আই,এম,এফের ঋণের শর্তের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে । কারণ, আই,এম,এফ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিল জ্বালানী তেলে আর ভর্তুকি দেওয়া যাবে না । এখন প্রশ্ন হলো, পুরো পরিস্থিতি আড়াল না করে জনগণকে আগেভাগে জানিয়ে দিলে অসুবিধা কোথায়? ইতিপূর্বে পৃথিবীর কোথায়ও হঠাৎ করে এক ধাপে জ্বালানী তেলের মূল্য ৫০% বাড়ানোর ইতিহাস নেই । জনগণ যখন লোডশেডিংয়ের যাতাকলে পিষ্ঠ, তখনই জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি গরীব, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের অপর চরম চপেটাঘাত । যখন রাজপথের বিরোধী দল জনসম্পৃক্ত বিষয় নিয়ে আন্দোলনের নেমেছে, তখন এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্ত উত্তপ্ত কড়াইতে ঘি ঢালার শামিল । রাশিয়ে – ইউক্রেন যুদ্ধকে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেও জনগণ তা এখন বিশ্বাস করবে না । রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ব্যাপারে একটি সর্বদলীয় বৈঠক আহবান করলে ভালো হতো । যদিও আমাদের দেশে এই ধরণের কোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি । সরকার জ্বলানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ জনগ্ণ জীবনের প্রতিটি ধাপেই অনুভব করবে । জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে গ্ণ পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি পাবেই, একই সঙ্গে নিত্য পণ্যের দাম হু হু বেড়ে যাবে আরেক দফা । একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, মানুষের প্রত্যহিক জীবনের খরচ বাড়লেও, একই হারে আয় বাড়ছে না । এছাড়া সামষ্ঠিক অর্থনীতি এবং কৃষি খাতে এর প্রভাব মারাত্মকভাবে পড়বে । সেচ ব্যবহার থেকে শুরু করে পণ্য পরিবহন, সবকিছুই জ্বালানী তেলের উপর নির্ভরশীল । এখন প্রশ্ন হলো কৃষি নির্ভর এই দেশে কৃষকরা যাবে কোথায় ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছিলেন, এক ইঞ্চি জমিও যাতে চাষাবাতের বাইরে না থাকে । কিন্তু সরকার যেই সিদ্ধান্ত নিলো, এতে কৃষি খাত মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পরে গেলো, তা বলার অপেক্ষা রাখে না । 

দ্বিতীয় যেই খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে, উৎপাদনমুখী শিল্প রপ্তানী খাত । এই খাতে জ্বালানীর তেলের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি মারাত্মক প্রভাব ফেলবে । ইতি মধ্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, রপ্তানী মুখী শীল্পে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবি জানিয়েছে । উল্লেখ্য, এখানে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করে বলতে চাই, জ্বালানী ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সমন্বয়ের কথা বলে এই মূল্য বৃদ্ধির পক্ষে সাফাই গাইলেন, যখন আন্তর্জাতিক বাজাড়ে জ্বালানী তেলের দাম কমলো । এখন পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সরকার মনোযোগ সহকারে তদারকি না করলে, সমূহ বিপদ আসন্ন । এছাড়া ক্ষমতাসীন সরকার রাজনৈতিক ভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে চাপের মধ্যে রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন । এদিকে আজ ঢাকয় দুটি গুরুত্বপূর্ণ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে । একদিকে চিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারি পররাষ্ট্র মন্ত্রী আজ ঢাকা সফর করছেন । ঢাকায় কূটনীতিকরা মনে করছেন, চিন ও যুক্তরাষ্ট্রের এই দুই মন্ত্রীর সফর অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে । তবে ঢাকা চাপে আছে কিনা, তা বলতে নারাজ । 

 

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।