বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সেলফোনভিত্তিক অপরাধ বন্ধে এনইআইআর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ


Published: 2017-07-24 17:30:01 BdST, Updated: 2024-04-18 18:36:41 BdST

বিজনেস ওয়াচ ডেক্স: হ্যান্ডসেট চুরি বা ছিনতাই রোধ ও অবৈধ বা নকল হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধের পাশাপাশি সেলফোনভিত্তিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শনাক্তে ২০১২ সালে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) স্থাপনের উদ্যোগ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পরবর্তীতে নানা জটিলতায় এটির বাস্তবায়ন হয়নি। তবে এনইআইআর স্থাপনের বিষয়ে সম্প্রতি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এটি স্থাপনে উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হবে।

প্রতিটি হ্যান্ডসেটে ১৫ সংখ্যার একটি অনন্য নম্বর থাকে, যা আইএমইআই নামে পরিচিত। হ্যান্ডসেটে *#০৬# এ নম্বরগুলো পর পর চাপলে আইএমইআই নম্বর জানা যায়। হ্যান্ডসেটের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, মডেল ও ক্রমিকের সমন্বয়ে গঠন করা হয় আইএমইআই নম্বর। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেটগুলোর ক্ষেত্রে এটি মানা হলেও নন-ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেটে ভুয়া আইএমইআই নম্বর ব্যবহার করা হয়। সিডিএমএ প্রযুক্তির হ্যান্ডসেটের ক্ষেত্রে এটি মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফায়ার (এমইআইডি) নামে পরিচিত। ১৬ সংখ্যাবিশিষ্ট আইএমইআইএসভি নম্বরও প্রচলিত রয়েছে, যা আইএমইআইয়ের একটি সফটওয়্যার সংস্করণ। এনইআইআর স্থাপনের মাধ্যমে দেশে ব্যবহূত প্রতিটি হ্যান্ডসেটে থাকা আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে গড়ে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার হ্যান্ডসেট আমদানি করা হয়। তবে বাজারে যেসব সেলফোন হ্যান্ডসেট পাওয়া যায়, তার এক-চতুর্থাংশই নকল। এসব সেটে আইএমইআই নম্বর থাকে না বা থাকলেও ভুয়া নম্বর ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বছরে হ্যান্ডসেটের অবৈধ আমদানিতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।

উন্মুক্ত দরপত্র ও উন্মুক্ত নিলাম— এ দুটি পদ্ধতির মধ্যে উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানকে এনইআইআর স্থাপনের দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। নিলামের মাধ্যমে লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান এনইআইআর স্থাপন, ব্যবহার ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে।

এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আইএমইআই নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু হলে হ্যান্ডসেট চুরি ও নকল হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধ হবে। এছাড়া রাজস্ব আদায় নিশ্চিত হবে। এ ব্যবস্থাটি চালু হলে সেলফোন সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শুধু বৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবহারের সুযোগ থাকবে।

২০১২ সালে এনইআইআর চালুর উদ্যোগ নেয় বিটিআরসি। ওই বছরের মার্চে এ-সংক্রান্ত প্রাথমিক একটি খসড়া নির্দেশনা প্রকাশ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ নির্দেশনার বিষয়ে প্রথম দফায় একই বছরের ৫ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় দফায় ২০ মের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের মতামত চাওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে এ কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ে।

এনইআইআর বাস্তবায়ন করা হলে প্রতিটি গ্রাহকের ফোন কলের সঙ্গে তার ফোন নম্বর, হ্যান্ডসেটের মডেল নম্বর এবং আইএমইআই নম্বরও অপারেটরের সার্ভারে যাবে। এর ফলে সিম কার্ড বদলে ফেলা হলেও হ্যান্ডসেটের তথ্যের মাধ্যমে চুরি হওয়া হ্যান্ডসেট উদ্ধার বা অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এনইআইআরকে সিইআইআর (সেন্ট্রাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার) ও টিআইএর (টেলিকমিউনিকেশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন) সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে হ্যান্ডসেট শনাক্তকরণের সুবিধা পাওয়া যাবে।

এর পাশাপাশি দেশের সব হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর দিয়ে ডাটাবেজ তৈরির নির্দেশনা দেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। নিয়মিতভাবে হালনাগাদও করতে হবে এ ডাটাবেজ। আর এটি করতে হবে সেলফোন অপারেটরদের নিজ উদ্যোগেই। আইএমইআই নম্বর নিবন্ধনে গ্রাহকের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নেয়ার প্রাথমিক প্রস্তাবনা রয়েছে।

খসড়া নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি সেলফোন অপারেটরকেই এনইআইআর স্থাপন করতে হবে। এজন্য প্রতিটি সেলফোন ফোন অপারেটরকে ফ্রড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফএমএস) স্থাপন করতে হবে। চূড়ান্ত নির্দেশনা প্রকাশের এক বছরের মধ্যে এনইআইআর ও এফএমএস বাস্তবায়ন করতে হবে অপারেটরদের। এনইআইআর ও এফএমএস বাস্তবায়নের পর জিআইপি (জেনুইন আইএমইআই ইমপ্লান্ট প্রোগ্রাম) বাস্তবায়ন করতে হবে। এটির বাস্তবায়ন শেষে নকল হ্যান্ডসেট বন্ধ করার কাজ শুরু করতে হবে অপারেটরদের।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে দেশে সেলফোনের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৯৫ লাখের বেশি। সেলফোনের গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি হ্যান্ডসেট আমদানিও বাড়ছে। ২০০৬ সালে দেশে হ্যান্ডসেট আমদানি হয় ৪২ লাখ। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) হিসাব অনুযায়ী, গত বছর ৩ কোটি ১২ লাখ সেলফোন হ্যান্ডসেট আমদানি করা হয়, যার বাজারমূল্য ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৬ শতাংশই স্মার্টফোন। আমদানি করা এসব স্মার্টফোনের আনুমানিক বাজারমূল্য ৬ হাজার কোটি টাকা। গত বছর স্মার্টফোন আমদানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৩ শতাংশের বেশি। চলতি বছর এ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৪০ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত বছর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে ৫ ইঞ্চি ডিসপ্লের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন।

সূত্র: বণিক বার্তা

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।