শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

১২ বছরেও ই-টেন্ডারে আসেনি সরকারের বড় কেনাকাটা


Published: 2023-09-26 11:13:03 BdST, Updated: 2024-05-04 21:29:30 BdST


নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে ই-টেন্ডারের ১২ বছর হতে চললেও এখন পর্যন্ত সরকার এই প্রক্রিয়ায় মাত্র ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ কেনাকাটা সম্পন্ন করেছে। সরকারি কেনাকাটার চুক্তিমূল্যের বড় অংশের দরপত্র এখনও এর আওতায় আসেনি। এদিকে ই-টেন্ডারে যতটুকু কেনাকাটা হয় তার প্রায় ৯৯ শতাংশ কাজের চুক্তিমূল্য ২৫ কোটি টাকার নিচে। এছাড়া ই-ক্রয় কাজের ৭০ শতাংশই পাচ্ছেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ধানমন্ডির ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবির নিজস্ব কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশে সরকারি ই-প্রকিউরমেন্ট : প্রতিযোগিতামূলক চর্চার প্রবণতা পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

টিআইবির আয়োজনে সংস্থাটির গবেষক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ২০১২ থেকে ২০২৩ সালের ই-দরপত্র সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন। ই-দরপত্র প্রক্রিয়ার কিছু ক্ষেত্রে ঠিকাদারের আধিপত্য রয়েছে উল্লেখ করে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য যোগসাজশ এবং গোষ্ঠীগত নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক প্রভাব বিদ্যমান আছে বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। গবেষণায় বলা হয়, ই-দরপত্রে ৯২টি ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে একক দরপত্র পড়ার হার ৭৫ শতাংশের বেশি। বছরভিত্তিক একক দরপত্রে ৪১৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৭৫ শতাংশ কাজ পেয়েছে। গবেষণা বলছে, ৬০ হাজার ৬৯ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে একক দরপত্রের মাধ্যমে।

২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া ই-দরপত্র প্রক্রিয়ায় ২০২১ সালের পর থেকে একক দরপত্র পড়ার হার বাড়ছে। একক দরপত্র পড়ার হার সর্বোচ্চ ছিল ২০১৮ সালে ২৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। করোনা মহামারির সময়ে একক দরপত্র পড়ার হার কমেছিল; আর ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসের হিসেবে এ হার প্রায় করোনাকালীন সময়ের আগের অবস্থায় কাছাকাছি গিয়ে উঠেছে। এদিকে সরকারের কেনাকাটা কাজে শীর্ষে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। শীর্ষ ৫ ঠিকাদারের হাতে থাকে গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ। প্রতি ৫টি দরপত্রের একটি একক দরপত্রের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়।

ই-প্রক্রিয়ায় একক দরপত্র শীর্ষ ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে গবেষণায় বলা হয়, একক দরপত্র ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে নোয়াখালী উপজেলা প্রকৌশল অফিস, হবিগঞ্জ বিপিডিবি’র বিক্রয় ও বিপণন বিভাগ-৫, সোনাইমুড়ি পৌরসভা, চট্টগ্রাম বিপিডিবি বিক্রয় ও বিপণন বিভাগ-৫, মাধবদী পৌরসভা, বরিশালের গৌড়নদী পৌরসভা। আর একক দরপত্র পাওয়া শীর্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মেসার্স ইকবাল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স কাপাশিয়া কন্সট্রাকশন, মেসার্স নোমান এন্টারপ্রাইজ।

চুক্তিমূল্য অনুযায়ী একক দরপত্র ভিত্তিক কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৭৬ কোটি টাকা মূল্যের আজিমপুর কলোনিতে ২টি বহুতল ভবন নির্মাণে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যাদেশ পায় পদ্মা অ্যাসোসিয়েটস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড, ১৫৩ কোটি টাকা মূল্যের ২০তলা বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ভবন নির্মাণ কার্যাদেশ পায় মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন, ১২৬ কোটি টাকার এসইউভি জিপ কেনার কার্যাদেশ পায় প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির জন্য ১০৬ কোটি টাকা মূল্যের পাঁচটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ পায় এম জামাল অ্যান্ড কোম্পানি এবং জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল ও জামালপুর রোড নির্মাণে ১০১ কোটি টাকার কার্যাদেশ পায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।

এদিকে সিটি করপোরেশনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি একক দরপত্র পড়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, ৬২ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং এর পরের অবস্থান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৫৫ দশমিক ২১ শতাংশ। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ৪২ দশমিক ১৭ শতাংশ। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যে তথ্য সরকারের প্রকাশিত, সেখান থেকে কতটুকু প্রতিযোগিতা হয়েছে, সেটাই ছিল এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, কার্যাদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, যোগসাজশ ও দরদাতাদের সিন্ডিকেট এখনো গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্রয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও দরদাতাদের সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয়। কাজ নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া, অবৈধভাবে সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়া এবং কাজ ভাগাভাগির কারণে মান খারাপ হচ্ছে।

প্রতিবেদন তুলে ধরে টিআইবির গবেষক দলের সদস্য তৌহিদুল ইসলাম বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেন। সেগুলোর মধ্যে ই-ইজিপির আওতার বাইরে থাকা উচ্চ চুক্তিমূল্যের সব দরপত্র দ্রুততার সঙ্গে ই-টেন্ডারিং প্রক্রিয়ায় আনার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। এছাড়া সরকারি কেনাকাটায় প্রতিযোগিতার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে উন্মুক্ত দরপত্র ও সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে মূল্যসীমা প্রত্যাহার করা, বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিতে সম্ভাব্য যোগসাজশ বন্ধে একক দরপত্র প্রবণ ক্রয় অফিসগুলোকে নজরদারির ভেতর আনা, কেনাকাটায় প্রতিযোগিতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।