সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের অভিযোগেপাল্টে গেল মানারাত ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ
Published: 2022-09-10 05:48:31 BdST, Updated: 2024-12-06 14:27:57 BdST
নিজস্ব প্রতিবেদক: হঠাৎ পরিচালনা পর্ষদ বা বোর্ড অব ট্রাস্টিজে পরিবর্তন আনা হয়েছে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির। ট্রাস্টি বোর্ডে পরিবর্তনের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সভা আহ্বান করা হয়। সভায় বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পরিবর্তন করা হয়। এরআগে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন আনা হয়েছিল। মানারাতের পূর্বের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সবাইকে বাদ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবারের সভায় নতুন করে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এ ছাড়াও অন্য সদস্যরা হলেন- সাবেক সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক মশিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম মাহমুদ, হাসুমনির পাঠশালার সভাপতি সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী মারুফা আক্তার পপি, বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সদস্য ইসরাত জাহান নাসরিন ও সোশ্যাল ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিহির কান্তি ঘোষাল।
প্রেসিডেন্টের আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের পুনর্গঠন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এতে বলা হয়, সরকারের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দেখা যায় যে, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ও প্রমাণ রয়েছে। মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক কাজে লিপ্ত করার জন্য বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা তাদের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করতে উস্কে দেয়াসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। উগ্রবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী ও জামায়াত-শিবিরের উচ্চ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারকদের গোপন যোগাযোগ রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদে উস্কানি দেয়া, পরিকল্পনায় সহযোগিতা করা দেশের প্রচলিত আইন ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৬(১০) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইতিপূর্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বিভিন্ন প্রতিবেদন ও তথ্য-উপাত্ত মোতাবেক এটি সুস্পষ্ট হয় যে, এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টিজ দাবিকারী ব্যক্তিগণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রাক্কালে কোনো ধরনের অনুদান বা অর্থায়নের সঙ্গে কখনো সম্পৃক্ত ছিল না এবং কোনো আইন বা অনুমোদন বলে তারা প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োজিত হয়নি। উল্লিখিত পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ৩৫(৭) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সার্বিকভাবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রাক্তন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ভেঙে দিয়ে নতুন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠনের প্রয়োজন হয়।২০২০ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. মো. নজরুল ইসলাম। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদে হঠাৎ এই পরিবর্তনে আতঙ্কিত এর শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কোনো পক্ষ নিজেদের হাতে নিতেই পরিকল্পিতভাবে এসব অভিযোগ আনছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, একটা প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা রাজনৈতিক সমর্থন থাকতেই পারে। তারা তো সরকারি বিধি মেনে এই পদে ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার ও শিক্ষার্থীদের উস্কে দেবার। এখন মন্ত্রণালয় কিন্তু বলছে না তারা কি করেছেন। তাদের স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে বোর্ড ট্রাস্টিজরা কীভাবে শিক্ষার্থীদের উগ্রবাদে জড়িত করতে পারেন।
২০০১ সালের অনুমোদন পায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য মতে, বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে ছিলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, দুই বছর আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কে গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল। সেই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যোগদানের পর পরই করোনা চলে আসে। তখনই প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাদের রিপোর্টে জামায়াতের সম্পর্ক আছে। কিন্তু আমি তো যোগদানের পূর্বে তা জানতে পারিনি। শুধুমাত্র গোয়েন্দা রিপোর্টের মাধ্যমেই এই প্রক্রিয়া গঠন করা হয়েছে। নতুন ট্রাস্টিজের বিষয়ে ভিসি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ভালো কিছু হবে এটাই আশা করা উচিত। এদিকে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালসমূহ দখলে নেয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস সাপোর্ট ফোরামের আয়োজনে এই মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহেরই নিজস্ব ট্রাস্টি বোর্ড থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় নর্থ-সাউথ, মানারাতেরও ছিল। সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে দিয়ে নিজস্ব লোকদের মাধ্যমে তা গঠনের উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষতি সাধন করছে। আমরা শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা বোধ করছি। ইউজিসি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. দিল আফরোজ বেগম বলেন, ইউজিসি অনেক আগে থেকেই মানারাতে বিভিন্ন সমস্যা দেখেছে। ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কি ধরনের অভিযোগ এটা তো গোপনীয় বিষয়। কিন্তু আমরা অভিযোগের বিষয়ে তাদের সতর্ক করেছি একাধিকবার। এরপরই এই সিদ্ধান্ত।
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।