শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যাট ফাঁকির ৩ কোটি টাকা জমা দিলো বাংলা ট্র্যাক


Published: 2022-12-21 02:46:40 BdST, Updated: 2024-04-26 06:05:43 BdST


নিজস্ব প্রতিবেদক : জ্বালানি, বিদ্যুৎ অবকাঠামো নির্মাণ ও ভাড়া এবং টেলিযোগাযোগ, খাদ্যপণ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলা ট্র্যাক লিমিটেড প্রায় ৩ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেয়। মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের (ভ্যাট গোয়েন্দা) পৃথক দুটি নিরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সেবা বিক্রয়, প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বা কেনাকাটা ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর ওই ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়। গত জুলাই মাসে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার ৪ মাস পর সম্প্রতি ভ্যাটের ওই টাকা জমা দিয়েছে বাংলা ট্র্যাক গ্রুপের (বাংলাক্যাট) প্রতিষ্ঠান বাংলা ট্রাক লিমিটেড। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, বাংলা ট্র্যাক ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে ভ্যাট ফাঁকি দেয়। ভ্যাট গোয়েন্দার তদন্তে ভ্যাট ফাঁকির সত্যতা পাওয়ায় পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা উত্তর কমিশনারেটকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ভ্যাট গোয়েন্দার প্রথম প্রতিবেদনে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত দুই কোটি ২৩ লাখ ৮ হাজার ৩৬৬ টাকা ও দ্বিতীয় প্রতিবেদনে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৭৯ লাখ ৮ হাজার ৫৬৮ টাকা ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর ) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, গোপন তথ্যানুসারে বাংলা ট্র্যাক লিমিটেডের ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটনে নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয় ভ্যাট গোয়েন্দা। গত ২০ জুলাই পৃথক প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হয়েছিল। সংস্থাটির প্রথম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দাখিলপত্র যাচাই করা হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে স্থানীয় ও আমদানি পর্যায়ে বিক্রয় দেখিয়েছে প্রায় ৫১১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আর প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রতিবেদনে (সিএ রিপোর্ট) বিক্রয় দেখানো হয়েছে প্রায় ৫১৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বিক্রয়মূল্য কম দেখানো হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। যার ওপর সুদসহ প্রযোজ্য মূসক প্রায় ৩৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা। অপরদিকে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে বিক্রয় দেখিয়েছে প্রায় ৫৬২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আর বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখিয়েছে প্রায় ৫৬৮ কোটি এক লাখ টাকা। বিক্রয়মূল্য কম দেখিয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। যার ওপর সুদসহ প্রযোজ্য মূসক প্রায় ২৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ এই দুই অর্থবছর বাংলা ট্রাক লিমিটেড বিক্রয় কম দেখিয়েছে ৯ কোটি ৮৩ লাখ ৬২ হাজার ৯০০ টাকা। যেখানে সুদসহ প্রযোজ্য মূসক ৬০ লাখ ৩৯ হাজার ২৫৭ টাকা, যা প্রতিষ্ঠানটি পরিহার বা ফাঁকি দিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটি স্পেয়ার পার্টস ও অয়েল, জেনারেটর ও মেশিনের যন্ত্রাংশ, ওয়ার্কসপ, ইঞ্জিনিয়ার ভাতা, রেন্টাল অপারেটরের মজুরি, রিপেয়ার অ্যান্ড মেনেটেন্স, সিকিউরিটি এক্সপেন্স, ইউনিফর্ম, বিনোদন, বিল্ডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাক্টশন, ফার্নিচার, অফিস সামগ্রী, প্ল্যান্ট অ্যান্ড মেশিনারি, গাড়ি, টেকনিক্যাল সার্ভিস, কুরিয়ার, প্রফেশনাল ফি, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফিসহ প্রায় শতাধিক খাতে প্রায় ৩৫৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। যার ওপর প্রযোজ্য উৎসে মূসক প্রায় ১৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা পরিশোধ করেনি, যা সুদসহ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। একইভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছর প্রতিষ্ঠান কেনাকাটা বা ব্যয় করেছে প্রায় ৩৬৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৪৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা পরিশোধ করেনি, যা সুদসহ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ দুই অর্থবছরে প্রতিষ্ঠান কেনাকাটা বা ব্যয়ের ক্ষেত্রে সুদসহ প্রায় এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা ৭৩ হাজার টাকা পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে। অপরদিকে, বাংলা ট্র্যাক লিমিটেড এই দুই অর্থবছর স্থাপনা ও জায়গা ভাড়ার ওপর সুদসহ প্রায় ২৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেনি। দুই অর্থবছর বাংলা ট্র্যাক লিমিটেড বিক্রয়, প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বা কেনাকাটা ও স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে সুদসহ দুই কোটি ২৩ লাখ ৮ হাজার ৩৬৬ টাকা ভ্যাট পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা যায়, সংস্থাটি ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরের দাখিলপত্র যাচাই করা হয়। ওই ২ বছরে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়, প্রতিষ্ঠানের ব্যয় ও স্থাপনা ভাড়ায় সুদসহ প্রায় ৭৯ লাখ ৮ হাজার ৫৬৮ টাকা ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জানতে বাংলা ট্রাকের (বাংলা ক্যাট) ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক ইকরামুল হকের সঙ্গে ফোন ও ওয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলেও জবাব পাওয়া যায়নি। এমনকি মেসেজ দিলেও জবাব মেলেনি। বাংলা ট্র্যাক গ্রুপ ২০০৪ সাল থেকে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো নির্মাণ ও ভাড়া, টেলিযোগাযোগ, খাদ্যপণ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। গ্রুপের ব্র্যান্ড বাংলা ক্যাট। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি কেটারপিলার জেনারেটরের একমাত্র আমদানিকারক বাংলা ট্র্যাক লিমিটেড (বাংলা ক্যাট)। বাংলা ক্যাট বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের অবকাঠামো, মেশিনারিজ ও সলিউশনের ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বাংলা ট্র্যাক গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- বাংলা ট্র্যাক কমিউনিকেশন লিমিটেড, অ্যাকর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিসেস লিমিটেড, টিফিন বক্স লিমিটেডের আওতাধীন বার্গার কিং।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।