শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক-কোম্পানির নাম পরিবর্তন‘পিএলসি’ যোগে গুনতে হবে দেড় থেকে চার কোটি টাকা


Published: 2023-03-22 17:38:41 BdST, Updated: 2024-04-19 10:38:21 BdST


নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘পাবলিক সীমিতদায় কোম্পানি’ শনাক্ত করার লক্ষ্যে ব্যাংক কোম্পানিগুলোর নামের শেষে পিএলসি (পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি) যোগ করতে হবে। পিএলসি যোগ করতে ব্যাংক কোম্পানিগুলোকে আলাদা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করতে হবে না। ব্যাংকগুলোর নামের শেষে ‘পাবলিক সীমিতদায় কোম্পানি’ বা পিএলসি শব্দটি যোগ করতে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে অনুমতিও দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায়। তবে নামের শেষে পিএলসি যোগ করার সাথে সাথে বড় একটি কর্মযজ্ঞও রয়েছে। এর মাধ্যমে চেক বইয়ের লেখা পরিবর্তন, ইন্টারনালভাবে পরিবর্তন করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর সম্মুখভাগে টানানো মেইন ব্যানারও পরিবর্তন করতে হবে। নাম পরিবর্তন করতে হবে বিলবোর্ডের। এটা সময়সাপেক্ষ, আর্থিকভাবেও বেশ বড় অংকের টাকা গুনতে হবে ব্যাংকগুলোকে। নাম পরিবর্তনে ছোট ব্যাংকের এক থেকে দেড় কোটি, বড় ব্যাংকের চার কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হবে। ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু এটি একটি বড় ধরনের পরিবর্তন। এতে দীর্ঘ সময়েরও প্রয়োজন পড়ছে। পিএলসির কারণে ব্যাংকগুলোর ইন্টারনাল কাজও বেড়েছে। বড় কর্মযজ্ঞের কারণে কিছুটা সময় নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এরইমধ্যে বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) ডেকে অনেক ব্যাংক আনুষ্ঠানিক পিএলসি যোগ করেছে। যদিও পুরোটা শেষ হতে আরও সময় প্রয়োজন পড়বে।

তবে ব্যাংকের পিএলসি (পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি) যোগ করতে বড় অংকের খরচ গুনতে হবে ব্যাংকগুলোকে। এটা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে অধিকাংশ ব্যাংক। কারণ পিএলসি করার মাধ্যমে ব্যাংকের নাম পরিবর্তন, চেক বই পরিবর্তন, বিলবোর্ড-ব্যানার পরিবর্তনসহ আরও নানা কর্মসূচি রয়েছে। এ বিষয়ে কথা হয় বেসরকারি ব্যাংকের এক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, পিএলসি করার মাধ্যমে আমাদের ইন্টারনাল অনেক কাজ থাকবে। সবকিছু পরিবর্তন করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন পড়বে। এ কারণে অনেকে ইজিএম করে এগিয়েছে আবার কেউ কেউ করার প্রক্রিয়ায়। এখানে দেড় থেকে চার কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হবে একেকটি ব্যাংকের। একই বিষয়ে কথা হয় একটি সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, পলিসি না বুঝতে পেরে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। এটা অনেক আগেই করার কথা। এক্ষেত্রে খরচের বিষয়টা প্রথমে আসবে। তবে সরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেসরকারি ব্যাংকের খরচ বেশি হবে। ক্যালেন্ডার, ডায়েরি, ব্যানারসহ সবকিছু তাদের বেশি থাকে।

পিএলসির অর্থ হলো পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। ২০২০ সালে কোম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি শনাক্ত করতে একটি নতুন ধারা যোগ হয়। সেখানে বলা হয়েছে ‘পাবলিক সীমিতদায় কোম্পানি’ শনাক্ত করতে নামের শেষে ‘পাবলিক সীমিতদায় কোম্পানি’ বা পিএলসি লিখতে হবে। দেশের বেশির ভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংকের শেয়ার স্টক একচেঞ্জে কেনাবেচা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার ফলে স্টক একচেঞ্জে লেনদেন হওয়া ব্যাংক কোম্পানিকে তাদের নাম পরিবর্তন করে নামের শেষে পিএলসি যোগ করতে হবে। চলতি মাসের (মার্চ) প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নির্দেশনায় বলেছিল, কোম্পানির নামের শেষে ‘পাবলিক সীমিতদায় কোম্পানি’ বা ‘PLC বা পিএলসি’ অন্তর্ভুক্ত করার আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে আলাদাভাবে আবেদন করতে হবে না। আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনের ক্ষেত্রে ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর যথাক্রমে ১১৬ ও ১১৭ ধারার আওতায় ব্যাংক-কোম্পানিসমূহ কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর পৃথকভাবে আবেদন দাখিলের প্রয়োজন হবে না। তবে নাম পরিবর্তনের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে গেজেট প্রকাশের জন্য বিষয়টি জানাতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, বিশ্বের সব জায়গায়ই পিএলসি আমাদের এখানেই শুধু প্রাইভেট ছিল। একটা ভুল ধারণা ছিল হয়তো। এটা সেন্ট্রাল ব্যাংকের রিক্যুয়ারমেন্ট না জয়েন স্টক এক্সচেঞ্জের রিক্যুয়ারমেন্ট যে পিএলসি বা পাবলিক লিমিটেড করতে হবে। আমরা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বলি। এতোদিন তারা খেয়াল করেনি, পাবলিক আর প্রাইভেট তো আলাদা। এখন ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে পিএলসি’র দিকে যাচ্ছে। সময়সাপেক্ষ হওয়ায় কাজে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কি না এ বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকের নাম পরিবর্তনের পরও অনেকদিন আগের নামের অনেক কিছুই আমরা করে দিয়েছি। অনেক ব্যাংকের চেক কিন্তু আগের মতোই হচ্ছে। আমরা সেভাবেই দেখছি, তবে তারা এগোচ্ছে। আজ যারা যেতে পারছে না, আগামীতে যাবে। এখানে জয়েন স্টক এক্সচেঞ্জের রিক্যুয়ারমেন্ট ছিল, তখন আমরা ব্যাংকগুলোকে বলেছি হ্যাঁ তোমরা প্রাইভেট না লিখে পিএলসি বা পাবলিক লিখবে। এজন্য কোনো টাইম-শিডিউল নেই, ধীরে ধীরে এগোচ্ছে ব্যাংকগুলো।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ব্যাংকগুলোর নামের শেষে পিএলসি লেখার কাজ চলছে। তবে লেখা পরিবর্তন করতে সময় ও বড় খরচ আছে সব ব্যাংকের। আবার এটা না করে উপায়ও নেই। যেহেতু এটা আইন হয়েছে, আইন সবাইকে মানতে হবে। আইন করা হয়েছে মানার জন্য, মানতে হবে। তবে পিএলসির সুবিধা-অসুবিধার বিষয়ে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না, সুবিধা তো থাকবেই। সব ব্যাংকই করবে ধীরে ধীরে। ইজিএম করে অনেকেই শুরু করেছে পিএলসির কাজ।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।