সভরেনট ফান্ড গঠনের মাধ্যমে পাচার করা অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব:হুম্মাম কাদের চৌধুরী
Published: 2024-10-24 13:27:07 BdST, Updated: 2024-12-06 14:14:17 BdST
আমিনুল ইসলাম: সভরেনট ফান্ড গঠনের মাধ্যমে পাচার করা অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে জানয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং বিএনপির সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। সম্প্রতি বিজনেস ওয়াচকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে একথা জানিয়েছেন তিনি। ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে বিজনেস ওয়াচকে এ সাক্ষাতকার দেন তিনি।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমাদের ভুল বুঝানো হয়েছে। তারা ঢাক ঢোল পিটিয়ে বলেছেন বাইরের টাকা আমরা ফেরত আনতে পারছি না। আসলে তারা চেষ্টায় করেনি। মনের মধ্যে স্বচ্ছতা থাকলে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা সম্ভব এবং বিশ্বাস করি ড. মোহাম্মদ ইউনূস সাহেব এ টাকা ফেরত আনতে পারবেন।
কিভাবে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা যাবে তার একটা ফর্মূলাও তিনি জানালেন হুম্মাম কাদের চৌধুরী। তিনি বলেন, ধরুন যুক্তরাজ্যে জাভেদ সাহেবের ৩৬০টি বাড়ি আছে নিলাম করতে হবে। খুবই দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। আর যুক্তরাজ্যে বসুন্ধরার প্রায় ১০০০ কোটি টাকা (৬০ মিলিয়ান পাউন্ড স্টার্লিং) মূল্যের ২৬টি সম্পত্তি এই নিলামের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে আমাদের যেটি করতে হবে, তাহলো ওই টাকা উদ্ধার করতে হবে। কিন্তু যুক্তরাজ্য সহজেই তা দিবে না। তরে এর জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে ওই টাকা দিয়ে একটি সার্বভৌম সম্পদ তহবিল বা সভরেনট ফান্ড বানানো হবে। এসব পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ এ ফান্ডের মধ্যেই থাকবে। বাংলাদেশ সরকারকে ফান্ডের বিপরীতে ঋণ দেওয়া হবে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে। এলসি সেই ক্রেডিট লাইনের বিপরীতে হবে। এ পেমেন্টের জন্য সরকার দেশ থেকে ডলার পাঠাবে না। সেই ফান্ড থেকেই তা পরিশোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিটা দেশের একটা সভরেনট ফান্ড আছে। বাংলাদেশে সেটা নেই। আওয়ামী লীগ আমলে সভরেনট ফান্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তখন বাংলাদেশের টাকা বিদেশে নিয়ে গিয়ে কীভাবে খেয়ে ফেলা যায় তার একটা ব্যবস্থা করতে চেয়েছিল। এমন দেশ আছে পাচার হয়ে যাওয়া টাকাটা ফেরত আনা খুবই সহজ। যেমন সুইস ব্যাংক থেকে টাকাটা ফেরত আনা খুব সহজ একটা ব্যাপার। আমাদের সুইজাল্যান্ডে কোনো বড় ব্যবসা নেই। কিন্তু যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রর সাথে আমাদের অনেক ব্যবসা। যেখানে যে নীতিটা ব্যবহার করা যায় তাই করা উচিৎ হবে। আউট অব দ্য বক্স চিন্তা করতে হবে। অনেক কিছুই সম্ভব। তরে এর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী তার পারিবারিক বিজনেস সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, আমরা গত ১৬ বছরে এই বিজনেস শব্দটাই ভুলে গেছি। আমাদের পারিবারিক যে ব্যবসাগুলো রয়েছে, যেমন ধরেন শিপিং বিজনেস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে এমন হয়েছে যে, আপনি যদি একটি ব্যাংকের কাছে গিয়ে বলেন আপনার শিল্পের জন্য ফান্ড লাগবে, ব্যাংক পারলে আপনাকে দৌড়ানি দেবে। ওরা বলবে এই অফিসে ঢুকছিস কেন? এই অবস্থা আমার পরিবারের জন্য বলব না, বেশিরভাগ বিএনপি ঘেঁষা মানুষের সাথে এটা হয়েছে।আমরা চেষ্টা করেছি। আল্লাহ চালিয়ে নিয়ে যাবে। মানুষজন অনেক সাহায্য করছে। যখন আমাদের দরকার পড়েছে তখনই সাহায্য করেছে।
তবে আমরা আওয়ামী লীগকে ম্যানেজ করে ব্যবসা করিনি। যারা আমাদের পিতাকে হত্যা করলো তাদের সাথে কিষের ম্যানেজ।যদওি বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের সাথে হাত মিলিয়ে অনেকেই ব্যবসা বাণিজ্য করেছেন। কিন্তু আমরা এটা করিনি। কারণ একে তো মন মানে না, দ্বিতীয়ত এই নোংরামির সাথে আমরা জড়াতে চাইনি। আওয়ামী লীগ যে দুর্নীতি করেছে এর ভাগিদার হতে চাইনি আমরা। আব্বা আমাদের জন্য কিছু রেখে যেতে পারেননি, কিন্তু মানুষের কাছে সম্মান এবং ভালোবাসা রেখে গেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই দুই মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন চলছে এ প্র্র্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী এই সরকার খুবই কষ্টে দেশ চালাচ্ছেন। এখন আমরা গাড়ি উদারহণ হিসেবে টানতে পারি। ইঞ্জিনটা অনেক দিন বন্ধ ছিল। গাড়ি চালু করতে অনেক সময় লাগবে। গত দুই মাসের মধ্যে মোর অর লেস সবকিছু বন্ধ ছিল। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের যে মিথ্যা কথা বলে যেত- আরে রিজার্ভে এত টাকা আছে, ব্যাংক সব ভালো আছে, এ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। কিন্তু যখন ব্যাংকগুলোর করুণ বাস্তবতাটা চোখের সামনে চলে আসে, তখন আমরা তো একটু ভয় পেয়ে যাই। তার ওপর অন্তর্বর্তী সরকার আমলে ব্যাংকগুলো বলা শুরু করল, আসলে তাদের হাতে কোনো টাকা নাই। আমরা এতদিন জোর-জবরদস্তি করে ৩০ শতাংশ মার্জিনের মধ্যে এলসি খুলছি। ব্যবসায়ীরা এখন অবস্থাটা বুঝতে পেরেছে। এখন যদি দরকার পড়ে ব্যবসায়ীরা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মার্জিনে এলসি খুলব। দেশের মানুষের প্রতি আমার একটা বিশ্বাস আছে। হ্যাঁ, এখন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু জনগণ মাইন্ড করছে না। নিত্যপণ্যের একটু বেশি খরচা করতে হচ্ছে জনগণকে, কিন্তু সেটা তারা মেনে নিচ্ছে। যেহেতু স্বাধীনতার জন্য ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে, ঠিক আছে আমি এখন আমরা ব্যবসা থেকে বড় লাভ নিলাম না, কষ্ট মেনে নিলাম। এখন রেমিট্যান্স যে হারে বাড়ছে, দেশের প্রবাসী মানুষের ধারণা হয়েছে শেখের বেটি শেখ হাসিনাকে কোনো টাকা দেবে না তারা। কিন্তু ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে দিতে রাজি আছে। আমাকে একজন বলছেন, এই সরকারের আমলে বড় বড় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম কে বন্ধ করে দিচ্ছে সেসব প্রতিষ্ঠান? কোনো উত্তর নেই।
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।