মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা সেতু বাড়বে বাণিজ্য ও রফতানি


Published: 2022-06-25 10:56:30 BdST, Updated: 2024-03-19 09:37:45 BdST


‍নিজস্ব প্রতিবেদক : পদ্মা সেতু বদলে দিতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র। বাড়বে বাণিজ্য ও রফতানি। তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থান। বদলে যাবে মানুষের জীবনযাত্রার মান। সেতুর ওপর দিয়ে যাচ্ছে গ্যাসের পাইপলাইন। যা দিয়ে গ্যাস পৌঁছাবে এই জনপদসহ আশপাশের অনেক জেলায়।

পদ্মা সেতু ঘিরে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন এ জনপদের সাধারণ মানুষ।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা এখন জংশন। ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে গাড়ি থামবে ভাঙ্গায়। এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে সেখানে। সেখান থেকে তিন দিকে যাওয়া তিনটি সড়ক দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলাকে যুক্ত করেছে পদ্মা সেতুর সঙ্গে। ফলে শিল্পায়নের নজর এখন পুরো দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে হলেও শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও বরিশালকে কেন্দ্রবিন্দু মনে করছেন শিল্পপতিরা।

ইতোমধ্যে সেতুকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা, বিশেষ করে মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুরে দেখা দিয়েছে পরিবর্তনের সূচনা। এ সেতুকে ঘিরে সম্ভাবনার আরেক বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে।

উন্নয়নের উন্মাদনা চলছে সেতু সংশ্লিষ্ট এলাকায়। এসব এলাকায় জমির দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি বাড়ছে নানা ধরনের স্থাপনা। বর্তমানে এক বিঘা জমির দাম স্থানভেদে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অনেকে শিল্প-প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি কিনে রেখেছেন। স্থানীয়রাও নানামুখী ব্যবসার উদ্যোগ নিচ্ছেন।

জানা গেছে, এখানেই গড়ে উঠছে তাঁতপল্লি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা মৌজায় ৫৯ দশমিক ৭৩ একর ও মাদারীপুর জেলার শিবচরের কুতুবপুর মৌজায় ৬০ একর করে ১১৯ দশমিক ৭৩ একর জমিতে নির্মাণ হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় তাঁতশিল্প ‘শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি’।

স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়নেই সরকারের এসব উদ্যোগ। প্রকল্পের আওতায় ৮ হাজার ৬৪টি তাঁত শেড নির্মাণ করা হবে। যেখানে ৮ হাজার ৬৪ তাঁতি পাবেন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। এর বার্ষিক উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৪ দশমিক ৩১ কোটি মিটার কাপড়।

পদ্মা সেতু এলাকায় এ তাঁতপল্লির প্রথম পর্যায়ের মাটি ভরাট ও সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষ হবে জুনের মধ্যেই। এ শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠিত হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হবে অন্তত ১০ লাখ মানুষের।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এক হাজার ৯১১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ করছে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড। পদ্মা সেতুর শরীয়তপুর প্রান্তের রেলস্টেশনের কাছাকাছি নির্মাণ হচ্ছে এ তাঁতপল্লি।

এর বাইরেও মাদারীপুরের শিবচর, শরীয়তপুরের জাজিরা, নড়িয়া ও ফরিদপুরের ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন উপজেলায় বড় বড় শিল্প গ্রুপ বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য জমি কিনে রেখেছেন। অনেক স্থানে তৈরি হচ্ছে পার্ক-রিসোর্ট।

নদীভাঙন ঠেকাতেও নড়িয়া, জাজিরা, শিবচরসহ বিভিন্ন এলাকায় নেওয়া হয়েছে নানা প্রকল্প। ইতোমধ্যে নড়িয়ায় তৈরি হওয়া বেড়িবাঁধে পর্যটকরাও যাচ্ছেন নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায় তৈরি হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

জানা গেছে, বেসরকারি উদ্যোগে ইলিয়াস আহম্মেদ চৌধুরীর নামে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় ‘দাদা ভাই উপশহর’ হাউজিং প্রকল্পের প্লট প্রস্তুতির কাজ ও বরাদ্দ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু বহুতল ভবন হয়েছে। সেগুলোতে মানুষজন থাকতেও শুরু করেছেন। প্রায় ১০৫ একর জমিতে গড়ে ওঠা এই প্রকল্পে ১ লাখের বেশি মানুষের আবাসন হবে বলে জানা গেছে।

সেতুর ওপারে হচ্ছে শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শেখ রাসেল শিশু পার্ক, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব নার্সিং ইনস্টিটিউট অ্যান্ড কলেজ, আইএইচটি ভবন, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, শিল্পকলা একাডেমি ভবন, মুক্তমঞ্চ ও অলিম্পিক ভিলেজ।

শিবচরে আইটি পার্ক গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে শিবচরের কুতুবপুরের কেশবপুরে ‘শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি অ্যান্ড হাইটেক পার্ক’ নির্মাণে ৭০ একর জায়গা নির্ধারণ করেছে আইসিটি মন্ত্রণালয়। প্রকল্প পাস হলে শুরু হবে ভূমি অধিগ্রহণ। সিঙ্গাপুরের আদলে গড়ে তোলা হবে বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও আইকন টাওয়ার।

এছাড়া, পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় সেতুর দুই প্রান্তে পদ্মা সেতু উত্তর থানা ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা নামে দুটি থানা উদ্বোধন করা হয়েছে। জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার আওতায় থাকবে পূর্ব নাওডোবা ও পশ্চিম নাওডোবা নামে দুটি ইউনিয়ন। মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু উত্তর থানার আওতায় থাকবে মেদিনীমণ্ডল ও কুমারভোগ ইউনিয়ন।

পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার জন্য জাজিরা প্রান্তে তৈরি হয়েছে শেখ রাসেল সেনানিবাস। গত মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’-এর আলোকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখেই ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে পায়রা সামুদ্রিক বন্দর নির্মাণ প্রকল্প শেষের দিকে। উৎপাদন শুরু করেছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। সরকারের এই দুই প্রকল্প ঘিরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া এখন অর্থনেতিক সমৃদ্ধি অর্জনকারী উপজেলা। পদ্মা সেতুর রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের রেললাইন যাবে পায়রা বন্দর পর্যন্ত।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘শুরুর দিকের ফিজিবিলিটি স্টাডি অনুসারে এই সেতু জিডিপিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ অবদান রাখবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে ওটা প্রায় দুই শতাংশ হবে।’

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।