শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ারবাজারের পতন ঠেকলো


Published: 2022-06-04 08:45:00 BdST, Updated: 2024-04-19 13:14:07 BdST


বিজনেস ওয়াচ ডেস্ক : দেশের শেয়ারবাজারের সূচকের পতন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে চলা পতন ঠেকাতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পতন ঠেকাতে মূল্যসীমা কমানোর সিদ্ধান্ত ভালো ফল দিয়েছে। ইতোমধ্যে পতনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে টানা ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে দেশের শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের প্রতি কার্যদিবসই ঊর্ধ্বমুখীতার মধ্য দিয়ে পার করেছে শেয়ারবাজার। এতে গত সপ্তাহে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি বেড়ে গেছে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোনও প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম একদিনে ২ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। শেয়ার বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএসইসির এই সিদ্ধান্তের ফলে পুরো সপ্তাহজুড়ে ঊর্ধ্বমুখী ছিল বাজার। প্রসঙ্গত, বিএসইসির এই সিদ্ধান্তের আগে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৫ শতাংশ।

বাজার স্বাভাবিক করতে সর্বোচ্চ সীমা কমানো ছাড়াও আরও বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে ২২ মে শেয়ারের বিপরীতে ঋণসীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে এখন বিনিয়োগকারীরা নিজে ১০০ টাকা বিনিয়োগ করলে তার বিপরীতে ১০০ টাকা ঋণসুবিধা পাচ্ছেন। আগে ১০০ টাকার নিজের বিনিয়োগের বিপরীতে একজন বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ ৮০ টাকা ঋণ নিতে পারতেন। এ ছাড়া ২৩ মে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে নতুন এক সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও শেয়ারে বিনিয়োগের আগে সেকেন্ডারি বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়।

বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনও আইপিওর শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক কোটা সুবিধা পেতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সেকেন্ডারি বাজারে ন্যূনতম তিন কোটি টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। এ ছাড়া গত সপ্তাহের শুরুতে প্রাক্-লেনদেন সুবিধাও তুলে নেওয়া হয় পতন থামাতে। সর্বশেষ ২৫ মে নতুন করে আবারও শেয়ারের দরপতনের সীমা কমানো হয়। অর্থাৎ সূচকের পতন ঠেকাতে শেয়ারের দরপতনের সীমা (সার্কিট ব্রেকার) কমিয়ে দেয় বিএসইসি।

এদিকে গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৮ হাজার ২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। অবশ্য এর আগে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন ঘটলে দুই সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে যায় ২৩ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৫৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২২টির। আর ৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২১৩ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট। এর আগে টানা চার সপ্তাহ কমেছিল সূচকটি। চার সপ্তাহের টানা পতনে সূচকটি কমেছিল ৪২৩ পয়েন্ট।

 

এদিকে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকেরও টানা চার সপ্তাহ পতনের পর বেড়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৩০ পয়েন্ট। আগের চার সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ১৭১ পয়েন্ট।

প্রধান মূল্যসূচক এবং ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত বাছাই করা সূচকের পাশাপাশি ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও চার সপ্তাহ পর বেড়েছে। গত সপ্তাহে এই সূচকটি বেড়েছে ৪২ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট। আগের চার সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৯০ পয়েন্ট।

গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৮৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬১০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৭৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৯২৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৫৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৮৭১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ৯ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।