শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরের বিরল বন্দরঅবকাঠামো না থাকায় ব্যয় বাড়ছে ব্যবসায়ীদের


Published: 2023-01-15 23:24:28 BdST, Updated: 2024-04-19 23:27:35 BdST

দিনাজপুর প্রতিনিধি : প্রতিষ্ঠার পর ১৬ বছর পেরোলেও দিনাজপুরের বিরল স্থলবন্দরে গড়ে ওঠেনি পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো। এ দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়েছে স্থান নির্বাচন, জমি অধিগ্রহণ, রেল ও সড়কপথ নির্মাণ, বন্দর কার্যালয় গড়ে তোলার পেছনে। কিন্তু একটি বন্দরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো যেমন—রেল স্টেশন, ওয়্যারহাউজ, গুদাম, কাস্টমস অফিস, পুলিশ চেকপোস্ট নির্মাণ করা হয়নি। ফলে এ স্থলবন্দর দিয়ে রেলপথে আমদানি-রফতানি হওয়া পণ্য দিনাজপুরের পার্বতীপুর, হিলি বা নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর রেল স্টেশনে ডাম্পিং করতে হচ্ছে। সেখান থেকে পণ্য ওয়াগনে লোড দিতে হচ্ছে। এর ফলে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। আবার এ বন্দরে পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন চালু না হওয়ায় দুদেশের নাগরিকরা ট্রেনযোগে যাতায়াত করতে পারছেন না। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিরল স্থলবন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ না করায় ভারত থেকে আসা পণ্য দিনাজপুরের পার্বতীপুর, হিলি বা নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর রেল স্টেশনে ডাম্পিং করতে হয়। একইভাবে ভারতে পণ্য রফতানি করতেও এসব স্টেশন থেকে পণ্য ওয়াগনে লোড দিতে হয়। এর ফলে আমদানি-রফতানি ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বিরল স্থলবন্দর দিয়ে পাথর ও চাল আমদানি হয়। দূরের স্টেশনে ডাম্পিংয়ের কারণে প্রতি সিএফটি পাথরে ২০ টাকা ও প্রতি টন চালে ১ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়।

দিনাজপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘বন্দরটির গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ শেষে পুরোপুরি চালু হলে ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক কমে যাবে। দেশের উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এ পথে আমদানি-রফতানি করতে পারবেন। এলাকায় নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার হবে। সে কারণে দ্রুত এটির অবশিষ্ট কাজ শেষ করে পূর্ণমাত্রায় চালু করা প্রয়োজন।’ স্থলবন্দরটিকে পূর্ণ সক্ষমতায় নিতে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিরল ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের সিইও মো. নাসিম। তিনি জানান, ২০০৬ সালে এ বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এলাকায় ১৭ দশমিক ৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় বালি ভরাট, সীমানা প্রাচীর, কাস্টমস অফিস, ইমিগ্রেশন কাউন্টার নির্মাণকাজ চলছে। পোর্ট অফিস নির্মাণ হয়েছে। সেই অফিসে নিয়মিত বসছেন কর্মকর্তারা। ভারতীয় সীমানায় নির্মাণকাজের টেন্ডারও হয়েছে। ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়ের সঙ্গে বন্দরের সংযোগ রাস্তা নির্মাণের অনুমোদনও দিয়েছে ভারত সরকার।

সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী দুই বছরের মধ্যে বিরল স্থলবন্দর দিয়ে সড়কপথে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য পণ্য এবং নাগরিকরা যাওয়া-আসা করতে পারবেন বলে প্রত্যাশার কথা জানান এ কর্মকর্তা। বিরল ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে রেলপথে ভারতের রাধিকাপুর রেল স্টেশন থেকে বাংলাদেশে বিরল স্টেশনে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন আসা-যাওয়া করত। তবে তা ছিল রেলওয়ের মিটার গেজ লাইনে। মাঝে ২০০২ সালে উভয় দেশের চুক্তি অনুযায়ী ভারত সরকার তাদের সীমানায় রেলপথ মিটার গেজ থেকে ব্রডগেজে উন্নীত করলেও বাংলাদেশ অংশে তা করা যায়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুর হয়ে বিরল এবং পঞ্চগড় পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ করলে ভারত থেকে রেলপথে বিরল সীমান্ত দিয়ে আবারো পণ্য পরিবহন চালু হয়। ইমিগ্রেশনও চালু ছিল। কিন্তু বর্তমানে ভারতের পক্ষে পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন বন্ধ রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ স্থলবন্দর দিয়ে সড়ক ও রেলপথে আমদানি-রফতানি সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। রেলপথে আমদানি রফতানি অনেক আগে থেকেই চালু আছে। কিন্তু বাংলাদেশ সীমানায় বন্দরের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কিত অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে রেল মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। অনুমোদন পেলে বিরল স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে।’ অন্যদিকে ভারত সরকার বিরল সীমান্ত দিয়ে রেলপথে পণ্য আমদানি-রফতানি চালু রাখলেও পাসপোর্ট ইমিগ্রেশনের অনুমতি নিশ্চিত করেনি। এ বিষয়ে ভারতের উত্তর দিনাজপুরের লোকসভা সদস্য দেবশ্রী চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান সহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দেবশ্রী এ বন্দর দিয়ে রেলপথের মতো সড়কপথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু করতে ভারত সরকারের পক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।