তিন মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ২০ হাজার কোটি টাকা
Published: 2023-11-02 22:43:23 BdST, Updated: 2024-12-06 14:33:00 BdST
নিজস্ব প্রতিবেদক : ডলার সংকটের সঙ্গে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এর চাপে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। পরিস্থিতি সামাল দিতে শর্তজুড়ে দেওয়া হয়েছে আমদানিতে। বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এসব কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমেছে। যদিও দেশে বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় আর্থিক হিসাবের বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৮১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গতকার বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্টে) ঘাটতির পরিমাণের এ চিত্রে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এক হাজার ২৯৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে দেশ। একই সময়ে আমদানি হয়েছে এক হাজার ৪৭৫ কোটি ডলারের পণ্য। এতে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১৮১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বৈদেশিক বাণিজ্যের আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ৩৯২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) একই সময়ের ৮৪ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশে আর্থিক হিসাব ভালো রাখাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ সূচকের ওপরই দেশের ঋণমান নির্ভর করে। আর্থিক হিসাবে ঘাটতি থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। ঋণ দেওয়ার সময়ও নানা শর্তজুড়ে দেয়। তথ্য বলছে, গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশের বেশি। আর গত দুই বছরে তা প্রায় ৩০ শতাংশ। এক বছর আগে ১ ডলার কিনতে খরচ হয়েছে ৯৬ থেকে ১০০ টাকা। তারও দুই বছর আগে যেটা ছিল ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা। সবশেষ আজ বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ১১১ টাকা। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানি কমলেও আশানুরূপ রেমিট্যান্স-রপ্তানি আয় আসছে না। একই সময়ে বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়া ও আগের দেনা পরিশোধ বেড়েছে। এতে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পরিশোধ ঝুঁকি এড়াতে দেশের রিজার্ভ থেকে প্রচুর পরিমাণ ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভেও টান পড়েছে। ধারাবাহিক কমছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত। গত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার দেশে আনেননি রপ্তানিকারকরা। হুন্ডি ও অর্থপাচারের কারণে রেমিট্যান্স আশানুরূপ আসছে না। আর এসব কারণে ডলার সংকট চরম আকারে পৌঁছেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯ কোটি ২০ ডলার। গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এ হিসাব ঘাটতি ছিল ৩৬৮ কোটি ডলার। তবে সামগ্রিক লেনদেন (ওভারঅল ব্যালেন্স) হিসেবে প্রথম তিন মাসে সামগ্রিক লেনদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ সূচকটি আগের বছর একই সময় ঘাটতি ছিল ৩৩১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এসময় ৫০৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগের বছর একই সময় পাঠিয়েছিলেন ৫৮১ কোটি ডলার। সেই হিসেবে তিনমাসে রেমিট্যান্স কমেছে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই সামান্য বেড়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যেখানে ১৪৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল দেশ। চলতি অর্থবছরে একই সময় এসেছে ১৪৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ সামান্য বেড়েছে ৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার হয়েছে। গত অর্থবছরে একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফলিও ইনভেস্টমেন্ট) ৪ লাখ ডলার কমে গেছে। গত ২০২১ সালের আগস্টে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই রিজার্ভ এখন ২ হাজার ৬৪২ কোটি ডলারে নেমেছে। আন্তর্জাতিক হিসাবপদ্ধতি ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম ৬)’ অনুযায়ী, রিজার্ভ বর্তমানে ২ হাজার ৬৬ কোটি ডলার। যদিও খাত বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকৃত রিজার্ভ আরও কম।
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।