বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার স্যানোফি বাংলাদেশের সরকারি শেয়ার কিনতে চায় বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালস


Published: 2022-03-02 23:44:01 BdST, Updated: 2024-04-25 22:13:38 BdST

বিজনেস ওয়াচ রিপোর্ট: এবার স্যানোফি বাংলাদেশের সরকারি শেয়ার কিনতে চায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। স্যানোফি বাংলাদেশে সরকার ও বাংলাদেশ  কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআইসি)  মালিকানাধিন ৪৫.৪০ শতাংশ শেয়ার ৩৯০ কোটি টাকা কেনার প্রস্তাব করেছে বেস্কিমকো ফার্মাসিটিউক্যালস। তাদের এ  ক্রয় প্রস্তাবে রাজি নয় বিসিআইসি। উপরন্ত শিল্পমন্ত্রণালয়ের হাতে থাকা ২৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ শেয়ার কেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিআইসি। তারা বলছে স্যানোফি বাংলাদেশে বিসিআইসির যৌথউদ্যোগে পরিচালিত অন্যতম একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যমান প্লান্ট ও অবকাঠামো ব্যবহার করে প্রতিবছর একশ টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে ৭৬ থেকে ১২০ টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। শুধুমাত্র ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত  মুনাফা হতে শেয়ারহোল্ডারদের ৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ দিয়ে আসছিল। এছাড়া অবন্টিত মুনাফা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির রিটেইন্ড আর্নিংস হিসেবে ১৭৮ কোটি ৮৭ লাখ ২১ হাজার টাকা সঞ্চিত আছে। যা স্যানোফির চলতি মূলধন ও ব্যবসা সম্পসারণে ব্যবহার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বেক্সিমকো তাদের ক্রয় প্রস্তাবে বলেছে, সানোফি বাংলাদেশের কাছ থেকে শিল্পমন্ত্রণালয় এবং বিসিআইসি প্রতি বছর ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ হারে মুনাফা পায়। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ৭৫ শতাংশ সক্ষমতায় উৎপাদনশীলতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সম্ভাব্য আয় বাড়ানোর জন্য  Biosimilar, Oncology, Insulin’s and Vaccine  প্লান্ট স্থাপনের জন্য ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার  প্রয়োজন হবে। এই অর্থ ব্যাংক লোন থেকে করা হলে প্রতিষ্ঠানটির আয় কমে যাবে। ফলে পরবর্তী ৬ থেকে ৭ বছর শেয়ার হোল্ডারদের কোনপ্রকার মুনাফা দেয়া যাবে না। এছাড়া ব্যাংক লোনের বাইরে অন্যকোন মাধ্যম থেকে অর্থ সংস্থান করতে হলে রাইট শেয়ার ইস্যু করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারকে বিনিয়োগ করতে হবে ২৭২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বেক্সিমকোর মতে সরকারের নীতিগত কারণে সরকারের রাইট শেয়ার অফার গ্রহণ খাতে অর্থ সংগ্রহ সম্ভব হবে না। তাই সানোফি বাংলাদেশে থাকা সরকারের ৪৫ দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার ২৭২ কোটি ৪০ লাখ টাকা দরে কেনে নেয়ার প্রস্তাব দেয় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। তবে বেক্সিমকোর এ ক্রয় প্রস্তাবে রাজি নয় বিসিআইসি। বিসিআইসি আরো বলছে সানোফি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের হাতে যাওয়ার পর হতে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃস্টি হয়েছে। তাই প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া  ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারিদের মাঝে বিরাজমান অচলবস্থা নিরসন না করায় প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সংকটে পড়ে গত কয়েক মাসে বড় ধরনের  লোকসানের সম্মুখিন হয়েছে।

তারা আরো বলছে বিগত কয়েক বছর যাবৎ প্রতিষ্ঠানটিতে বিদ্যমান প্লান্ট ও অবকাঠামো ব্যবহার করে ওষধ উৎপাদন ও বিপণন করে প্রায় শতভাগ মুনাফ করে আসছিল। স্যানোফি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালসের কাছে যাওয়ার পর থেকে তাদের পারফম্যান্স এখোন দৃশ্যমান হয়ে উঠেনি। আগামীতে নতুন ব্যবস্থাপকদের পারফম্যান্স পর্যালোচনান্তে নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।   এছাড়া বেক্সিমকো ফাম্যাসিটিউক্যালস তাদের আবেদনে যে সকল নতুন প্লান্ট স্থাপনের জন্য ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার  প্রয়োজনীতার কথা বলা হয়েছে, সে সকল ওষধের বর্তমান ও ভবিষ্যত বাজার চাহিদা, বাজারের বিদ্যমান প্রতিযোগিতা,  নতুন বিনিয়োগ হতে কী পরিমাণ মুনাফা কতদিন পর্যন্ত পাওয়া যাবে তার কোন তথ্য উপাত্ত কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া এই প্লান্ট সম্পর্কে কোন প্রকার ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিও করা হয়নি। তাই  নতুন করে  স্যানোফি বাংলাদেশে ২৭২  কোটি ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যুক্তিযুক্ত হবে না বলে মনে করে বিসিআইসি। তবে শিল্প মন্ত্রণালয় তাদের শেয়ার প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তাহলে বিসিআইসি নগদ অর্থে উক্ত শেয়ার ক্রয় করবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান পরিচালক পদ ও অপরিবর্তী রাখার নিদ্ধান্ত নেয় তারা। এতে স্যানোফি বাংলাদেশে বিসিআইসির অবস্থান আরো শক্তিশালি হবে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে স্যানোফি ছাড়াও আরো ৫টি  বহুজাতিক কোম্পানি পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

উল্লেখ্য কোম্পানির বাংলাদেশের দুই বিদেশী শেয়ারহোল্ডার বাংলাদেশী ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফ্যাসন্স লিমিটেড এবং যুক্তরাজ্যের ‘মে অ্যান্ড বেকার লিমিটেডের’ কাছ থেকে সানোফি বাংলাদেশের ৫৪. শতাংশ শেয়ার ৪৮০ কোটি টাকায় অধিগ্রহণ করেছে বেক্সিমকো। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস রাষ্ট্রিয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এ অর্থপরিশোধ করে। কিন্তু ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর এক বিবৃতিতে কোম্পানি বলেছে যে সানোফি তার মালিকানা ছেড়ে দিলেও  বাংলাদেশে তাদের পণ্য বিক্রি অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, সানোফি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) তত্ত্বাবধানে ১৯৫৮ সাল থেকে বাংলাদেশে ওষুধ তৈরি করে আসছে। কোম্পানিটি ১৯৫৮ সালে মে এবং বেকার নামে বাংলাদেশে তার কার্যক্রম শুরু করে। পরে ২০০৪ সালে সানোফি-অ্যাভেন্টিস গঠনের জন্য বিভিন্ন সংস্থার সাথে একীভূত হয়। ২০১৩ সালে এটির নামকরণ করা হয় সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড। গাজীপুরের টঙ্গীতে কোম্পানিটির একটি আধুনিক ফার্মাসিউটিক্যাল প্ল্যান্ট রয়েছে। কোম্পানিটি সরাসরি আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশে তার গ্লোবাল ব্র্যান্ডের ভ্যাকসিন, ইনসুলিন এবং কেমোথেরাপির ওষুধ সরবরাহ করে। বর্তমানে সানোফি বাংলাদেশের  ৪৫.৪০ শতাংশ মালিকানা বাংলাদেশ সরকারের। এর মধ্যে শিল্পমন্ত্রণালয়ের ২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং  বিসিআইসির ২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সানোফি বাংলাদেশ ২০১৯ সালে ৩৮৮ কোটি টাকা রাজস্ব, ৪৯.৭৯ কোটি টাকা মুনাফা এবং ৬০৯ কোটি টাকার মোট সম্পদ অর্জন করেছে।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।