শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জানুয়ারির মধ্যে ফাইভ-জির হোম নেটওয়র্ক চালু হবে: ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী


Published: 2022-08-15 05:13:21 BdST, Updated: 2024-04-20 14:49:11 BdST

নিজস্ব প্রতিবেদক:বিটিআরসি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রণয়ন করতে যাওয়া ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া ও ওটিটি প্লাটফর্ম বিষয়ক নীতিমালা দুটিকে শিল্পবান্ধব করার দাবি জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। শনিবার এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত রেগুলেশন অব ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্মস : দ্য নিড টু স্ট্রাইক দ্য রাইট ব্যালান্স শীর্ষক সেমিনারে তারা এ দাবি জানান।

সেমিনারে উদ্যোক্তারা বলেন, তথ্য প্রযুক্তির যুগে নিউ মিডিয়া অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নতুন সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অনেক উদ্যোক্তা এই সৃষ্টিশীল খাতে বিনিয়োগ করছেন। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। একই সাথে দেশীয় সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে সোশ্যাল ও ডিজিটাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো ভূমিকা রাখছে। তাই সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিমালাগুলো এ খাতের বিকাশে সহযোগীতামূলক হওয়া জরুরি। একই বিষয়ে দুটি ডাক ও টেলিযোগযোগ মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রনালয়ের ভিন্ন নীতিমালার কারণে ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি হওয়ার শঙ্কা করেন বক্তারা।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, এ সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে আলোচনা করেই প্রস্তুত করা হয়েছে। তারপরও সবার মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধন করে চুড়ান্ত নীতিমালা তৈরির আশ্বাস দেন মন্ত্রী। দুই মন্ত্রণালয়ের একই বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, টেলিভিশন, রেডিওসহ সম্প্রচার মাধ্যমগুলো তদারকির দায়িত্ব তথ্যমন্ত্রণালয়ের। অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়াসহ ইন্টারনেটভিত্তিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মসহ অন্যান্য মাধ্যমের দায়িত্ব ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের। তাই দুটো ভিন্ন এখতিয়ারভুক্ত হওয়ায় দুই মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে নীতিমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে।  নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিমালার প্রয়োজন রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ফেসুবক, ইউটিউব যুক্তরাষ্ট্রের প্রক্ষাপটে তৈরি কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলে। বাংলাদেশের বাস্তবতার সাথে সেগুলোর কোন কোন ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য নেই। তাই এসব প্ল্যাটফর্মে নিরাপদ কনটেন্ট নিশ্চিত করার জন্য এই নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। সরকার বাকস্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রবিরোধী ও সংবিধানবিরোধী কোন কার্যক্রম মেনে নেয়া হবে না।

মন্ত্রী জানান, আগামী জানুয়ারির মধ্যে দেশে ফাইভজির হোম নেটওয়র্ক চালু হবে। যার মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তথ্যপ্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন করা যাবে। বিশ্ব এখন ৪র্থ শিল্পবিপ্লব পার হয়ে ৫ম শিল্পবিপ্লবের দিকে এগোচ্ছে মন্তব্য করে ব্যবসায়ীদের আগামীদিনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মকবুল হোসেন পিএএ জানান আদালতের নির্দেশেই দুটি মন্ত্রণালয় তার নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে নীতিমালার খসড়া প্রস্তত করেছে। তাই নীতিমালা দুটি সাংঘর্ষিক হবার কোন সুযোগ নেই। এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন নীতিমালার কারণে যেন নতুন এই সম্ভাবনাময় শিল্পের বিকাশ সংকুচিত না হয়ে যায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়াও  বিটিআরসি ও তথ্য মন্ত্রণালয় কোন কোন বিষয় তদারকি করবে সে বিষয়গুলো সুস্পষ্ট করার তাগিদ দেন সভাপতি। তিনি বলেন, দেশে ডিজিটাল যেসব সুযোগ তৈরি হয়েছে সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশীয় সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার আহ্বান জানান মোঃ জসিম উদ্দিন। একই সাথে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও তাগিদ দেন তিনি। এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু কোভিড মহামারীকালীন তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষাসহ সব ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। মূল প্রবন্ধে খসড়া নীতিমালায় শাস্তির বিধানকে কমানো, নেট নিউট্রালিটি নিশ্চিত করা এবং প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব ও সরকারি নিয়ন্ত্রণে সমন্বয় আনার সুপারিশ করা হয়।

প্যানেল আলোচনায় এফবিসিসিআই’র পরিচালক সৈয়দ আলমাস কবির জানান, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বৈশ্বিক বাজারের আকার ১৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৭ সালা নাগাদ ২৭৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। এমন সম্ভাবনাময় বাজারের বাংলাদেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে শিল্পবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ণের আহ্বান জানান তিনি।  বিটিআরসির মহাপরিচালক (সিস্টেম ও সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাসিম পারভেজ জানান, দায়িত্বের সাথে ব্যবসা নিশ্চিত করতে প্রস্তাবিত নীতিমালা প্রস্তত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ফেসবুক, টিকটকসহ ৬১টি সংস্থার মতামতের ভিত্তিতে নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে সংস্থাটি। ভারত, নিউজিল্যান্ডের নীতিমালাও যাচাই করে দেখা হয়েছে। যে কোন ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো বিটিআরসি বিনামূল্যে নিবন্ধন করতে পারবে বলে জানান বিটিআরসির (সিস্টম ও সার্ভিসেস) মহাপরিচালক। কোভিড মহামারি উত্তর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সময়ে নতুন নীতিমালার অর্থনৈতিক প্রভাব যাচাই করে তা কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছেন এশিয়া ইন্টারনেট কোয়ালিশন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেফ পেইন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রকাশের আগে যাচাইযোগ্য কনটেন্ট এবং যেগুলো যাচাইযোগ্য নয়, এমন কনটেন্টের জন্য আলাদা নীতিমালার দাবি করেন ফেসবুকের মুল কোম্পানি মেটার পাবলিক পলিসি বাংলাদেশের প্রধান শাবনাজ রশিদ দিয়া।বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমান জানান, যারা বাংলাদেশের বাজারে ডিজিটাল কনটেন্টের ব্যবসা করবে, তাদের অবশ্যই এদেশে অফিস স্থাপন করতে হবে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গবিডির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও এর পরিচালক নাভিদুল হক বলেন বাংলাদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিদ্বন্দীতা করছে। তাই নীতিমালা দিয়ে নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে সহায়তা করার আহ্বান জানান তিনি। ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ খসড়া নীতিমালা প্রস্তাবিত শাস্তির মাত্রাকে আরো কমানো ও শিল্পবান্ধব করার আহ্বান জানান। আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে রেগুলেশনস ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ২০২১ চুড়ান্ত করার কথা রয়েছে বলে জানানো হয় সেমিনারে।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।