বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রূপপুরে বিনিয়োগকৃত অর্থ রুবেলে পরিশোধের চাপ দিচ্ছে রাশিয়াঘনিভুত হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট


Published: 2022-11-10 06:22:52 BdST, Updated: 2024-04-24 19:28:31 BdST


কুদরাত-ই-খোদা
বাংলাদেশের চরম অর্থনৈতিক সংকটের সাথে অতি দ্রুত যোগ হয়েছে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিগত সংকট । অর্থনৈতিক সংকট বৈশ্বিক পরিস্থিতির সাথে যোগসূত্র থাকলেও রাজনৈতিক সংকট ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিষয়টি আমাদের অভ্যন্তরীন । সম্প্রতি ইডেন কলেজের ঘটনাটি রাজনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম উদহারণ। ক্রমবর্ধ্মান রাজনৈতিক সহিংসতায় ইউরোপিও ইউনিয়ন সহ মার্কিন রাষ্ট্রদূত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন । যদিও ক্ষমতাসীন সরকার বিরজমান এই সংকটকে আমলে নিতে নারাজ । তবে সংকট যে গভীরতর হচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই । প্রায় প্রতিদিনই রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সাথে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ও পুলিশের সংঘর্ষের খবর পাচ্ছি আমরা । অপরদিকে মিয়ানমার তার সামরিক আচরণ অব্যাহত রেখেছে। আমরা শুধু রাষ্ট্রদূতকে তলব করেই সতর্ক করছি । এটা হয়তোবা কূটনৈতিক কৌশল হতে পারে কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এটা কৌশলগত সামরিক জবাব না ।
আমাদের বাস্তব ভিত্তিক সিদ্ধান্ত সহ আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টি বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরতে হবে । স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্তের প্রশ্নে বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি । অপরদিকে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার এই অবস্থায় ডলার সংকট সহ আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক বিপর্যয় অনিবার্য কারণ আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ ক্রমশই কমছে । দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা এই সংকট নিয়ে উদ্বীগ্ন । তবে বাংলাদেশ ব্যংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এই প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিশ্রুত ঋণ দ্রুতই আসবে । এতে করে ডলারের উচ্চ মূল্য রোধ করা যাবে । তবে দূর্ভাগ্যজনক সংবাদ হলো এই, রূপপুর পারমানবিক প্রকল্পে রাশিয়ের বিনিয়োগকৃত অর্থ সুদসহ রাশিয়ান মুদ্রা রুবেলে পরিশোধ করতে চাপ দিচ্ছে রাশিয়া । এছাড়া গত দুমাসে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের পাঠানো ডলারের পরিমাণও কমছে । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনিয়োগের জন্য যে আহবান জানাচ্ছেন, তার অন্যতম পূর্ব শর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা। বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে অবশ্যই দেশে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ শান্তিপূর্ণ হতে হবে । বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিকল্প নেই । অপরদিকে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো স্থগিত করা হলেও, কোন নীতিমালায় অর্থ ব্যয় হওয়া প্রকল্পগুলো পুনরায় চালু হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট কোনো দিক নির্দেশনা নেই । এইদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিচ্ছে । এতে করে চলমান প্রকল্পও স্থগিত হয়ে যাচ্ছে । কিছুটা সুখের খবর হলো, বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের রাজস্ব আয় বেড়েছে । সূত্র মতে সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানী ৬ শতাংশ এবং প্রবাসী আয় ১০.৫ শতাংশ কমেছে । এটাই উদ্বেগের অন্যতম কারণ । তবে আগামী মাসে প্রবাসী আয় বাড়তে পারে । রাষ্ট্রায়াত্ত এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ঋণ প্রবাহ ও এলসি পরিমাণ কমেছে । আমদানি রপ্তানীতে ভারসাম্য না আনতে পারলে অর্থনৈতিক ঝুকিতে থাকবে বাংলাদেশ । এইদিকে অভ্যন্তরিন রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা দুটোই ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য একটা প্রচন্ড চাপ । ভূ রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় ততটা সফল নয় । এই সব সমস্যা মোকাবেলায় ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা প্রণয়নে দূরদৃষ্টি অনিবার্য । অপরদিকে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ ক্ষমতাসীনরা কিভাবে মোকাবেলা করে তাও একটি দেখার বিষয় । এটা সত্য যে ক্ষমতাসীন্দের আগামীতে সুষ্ঠ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে ।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।