শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটকাল এবং গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি


Published: 2022-12-24 22:55:19 BdST, Updated: 2024-04-20 16:40:20 BdST


কুদরাত-ই-খোদা

ডিসেম্বরের এই বিজয়ের মাসে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিজয়, সংস্কৃতির বিজয় এবং মূল্যবোধের বিজয় কতটা এগিয়েছে এটা এখন প্রশ্নবিদ্ধ । জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে যারা খোঁজখবর রাখেন, তাদের অভিমত হলো রাজনীতি এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা ব্যবসায়ী এবং বেনিয়াদের হাতে চলে যাওয়ায় যে সংকটটা তৈ্রি হয়েছে, এতে করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাত অনেকটাই খাদের কিনারায় । এতে করে স্থায়ীভাবে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও অপরাপর প্রতিষ্ঠানগুলো মৌলিক ভিত্তির উপর আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না । রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের অভিমত রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে দল এবং সরকার যদি একাকার হয়ে যায়, এতে করে রাষ্ট্রের মূল সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সার্বভৌমের বিষয়গুলো বিপদের মধ্যে পরে । এতে করে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, জনগণ এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকায় যেসব সরকারি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় । ওইসব প্রতিষ্ঠানের সাথে সাধারণ মানুষের একটি ব্যাপক ফারাক তৈরি হয় । যা রাষ্ট্রের মূল কাঠামোকে নাড়া দেয় । প্রাথমিকভাবে যারা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন, আক্ষরিক অর্থে তারা বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেন না । দলদাস, অনুপ্রবেশকারী সুবিধাভোগী এবং রাজনৈতিক চাটুকাররা একটা মায়ার জাল তৈরি করেন । এতে করে জনগণের সাথে সরকারের একটি চূড়ান্ত দুরত্ব তৈরি হয় ।

ভূ রাজনৈতিক বৈশিষ্টে, দক্ষিণ এশিয়ার এই বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে বিষয়টি গভীরভাবে অনুধাবন করে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় নিজেদের গণতান্ত্রীক ও সার্বভৌম অবস্থা তুলে ধরতে হবে । সরকার ও ক্ষমতাসীন রাজনীতিকরা যত দ্রুত বিষয়টি বুঝতে পারবেন, ততই দেশের জন্য ভালো । কারণ শক্তিধর দেশগুলো, ছোট উদার গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে দমন নীপিড়ন করতে ভয় পায়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দুর্বল হলে, তারা নানান ধরণের সুযোগ নিতে থাকেন । তাই আগামীতে একটি সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা সৃষ্টি করে, বাংলাদেশ একটি অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ, এই কথাটা পুরো বিশ্বে প্রমাণ করে দিতে হবে ।

অপরদিকে অর্থনৈতিক কূটনীতি, ভারসাম্যমূলক কূটনীতি সহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগ কৌশলগতভাবে ্না বাড়াতে পারলে, সে ক্ষেত্রে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার যেই পরিস্থিতি আমরা মোকাবেলা করছি, তা থেকে উত্তরণের সংকট আরো ঘনীভূত হবে। ২০২৩-২০২৬ সাল পর্যন্ত এই সময়টি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরই প্রেক্ষিতে ইউরোপ আমেরিকা সহ উন্নত দেশগুলোতে দেশের স্বার্থের অনূকুলে সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য বার্গেইনিং স্ট্যান্ডার্ডটা উন্নত করা জরুরি। এর পূর্ব শর্ত হলো, একটি শক্তিশালী জনপ্রশাসন তৈরি করা । পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল, দক্ষ এবং কার্যকর করতে চুক্তিভিত্তিক বা রাজনৈতিক নিয়োগ কিছুটা কমিয়ে দিয়ে পেশাদ্বারিত্যকে ফিরিতে আনতে হবে । রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসন বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ তারা বলছেন, অত্যন্ত গতিশীল প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে, এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির মর্যাদার মান নিশ্চিত করতে না পারলে, সকল উন্নয়নি থমকে যাবে এবং এলোমেলো হয়ে যাবে। আর্থিক এবং ব্যাংকিং খাতে যেই রকম দুর্বিঃসহ অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের দুটি শর্ত হলো দক্ষ আর্থিক প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলছেন। সকল সরকারি সংস্থা সহ পেশাদারী সংগঠনগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। প্রতিটি সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি তার দায়বদ্ধতা ও কর্তব্য বিষয়ে আরো বেশি সচেতন হতে হবে । এই বিষয়গুলো কার্যকর করতে পারলেই বাংলাদেশের সোনার বাংলা এবং উন্নত ও মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে খুব একটা বেশী সময় লাগবে না । সরকারের নীতি নির্ধারকদের উচিত হবে আত্মসমালোচনা এবং সমালোচনা ইতিবাচক দৃষ্টি ভঙ্গিতে নিজেদেরকে আরো বেশি সমৃদ্ধশালী করে তোলা । পরিশেষে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই ।

সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।